
রমজানের আগ মুহূর্তে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভোগ্যপণ্য আমদানি বেড়েছে। এবার রেকর্ড পরিমাণে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপণ্য আমদানি হয়েছে। জানুয়ারি মাসে ভোগ্যপণ্য বোঝাই ৫৩টি জাহাজ নোঙর করেছে বন্দরে। এসব জাহাজে থাকা ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৬২০ টন পণ্য এরই মধ্যে খালাস হয়েছে। গত বছরের একই মাসে ৪০টি জাহাজে পণ্য এসেছিল ১০ লাখ টনেরও কম।চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে ভোগ্যপণ্য বোঝাই ২২টি জাহাজ এসেছে। এগুলো থেকে খালাস হচ্ছে প্রায় সোয়া আট লাখ টন পণ্য। গত বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৭ জাহাজে ৫ লাখ টন ভোগ্যপণ্য। এ ছাড়া বন্দরে আসার অপেক্ষায় আছে পণ্যবোঝাই আরও ১০টি জাহাজ।এদিকে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে খেজুর, তেল, চিনিসহ গুরুত্বপুর্ণ বেশ কিছু পণ্যের শুল্কহার কমিয়ে দিয়েছে সরকার। ভোজ্যতেল, চিনিসহ কিছু পণ্যের দাম বিশ্ববাজারেও এখন নিম্নমুখী। তাই ছোলা, খেজুর ও ডাল জাতীয় পণ্যের দাম কমছে। বাজার যথাযথভাবে তদারকি করলে ভোজ্যতেলের দামও স্থির হবে বলে মনে করছেন ভোক্তারা।দেশের অন্যতম বৃহৎ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম জানান, এবার আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন তারা। বাড়িয়েছেন পণ্যের সরবরাহও। শুধু বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বাড়িয়েছে টিকে গ্রুপ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১১ হাজার ৮১০ টন তেল সরবরাহ দিয়েছেন, যা আগের বছর ছিল ৯ হাজার ৫০০ টন।
অন্য আমদানিকারকরাও আমদানি বাড়ানোয় বন্দরে জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান তসলিম। খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মিয়া মার্কেট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিছ আলম বলেন, আগের বছরের তুলনায় এবার কিছু পণ্যের আমদানি বেশি হয়েছে। এ জন্য ছোলা, মটরসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমছে। সরবরাহ বাড়ালে ভোজ্যতেলের বাজারও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। জাহাজ বেশি, পণ্যের সংখ্যাও বেশি গত বছরের তুলনায় এ বছর জাহাজের সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনি বেশি পণ্যের সংখ্যাও। এবার জানুয়ারি মাসে শুধু চাল নিয়ে এসেছে আটটি জাহাজ। এগুলোতে চাল ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৭২৬ টন। ১৩টি জাহাজ বোঝাই করে গম এসেছে ৬ লাখ ১৫ হাজার ৫৫৫ টন। ১৪টি জাহাজে ভোজ্যতেল এসেছে ১ লাখ ৯১ হাজার ৯২৬ টন। তিনটি জাহাজে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি এসেছে ৮৯ হাজার ১৪৯ টন। ছোলা, মটর ও ডাল জাতীয় পণ্য নিয়ে বন্দরে নোঙর করেছে ১৫টি জাহাজ। এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হয়েছে ৪ লাখ ৩২ হাজার ৬২ টন।
চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে ভোগ্যপণ্য নিয়ে বন্দরে নোঙর করে ১০টি জাহাজ। ১ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নোঙর করা এসব জাহাজে পণ্য এসেছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৮২০ টন। এর মধ্যে চালের দুটি জাহাজে পণ্য ছিল ৫ হাজার ৬০ টন। গমের দুটি জাহাজ এনেছে ৮৪ হাজার ৯২২ টন পণ্য। সবচেয়ে বেশি জাহাজ এসেছে ভোজ্যতেলের। পাঁচটি জাহাজে পণ্য এসেছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৫৩৮ টন। একটি জাহাজে চিনি তৈরির কাঁচামাল এসেছে ৫৬ হাজার ৩০০ টন। এই ধারা অব্যাহত ছিল পরের ১০ দিনও। ১১ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোগ্যপণ্য নিয়ে বন্দরে নোঙর ফেলেছে ১২টি জাহাজ। এসব জাহাজে পণ্য এসেছে ৫ লাখ ৫৩ হাজার টন। এর মধ্যে দুটিতে চাল, দুটিতে ভোজ্যতেল, দুটিতে ছিল ডাল জাতীয় পণ্য। এ ছাড়া একটি করে জাহাজ এসেছে চিনি ও ভুট্টা এবং সর্বোচ্চ চারটি জাহাজ এসেছে গমের।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টন। এর মধ্যে রমজানে চাহিদা ৩ লাখ টন। চিনির চাহিদাও ২০ লাখ টন। রমজানে ৩ লাখ টন। দেশে উৎপাদিত হয় ৩০ হাজার টন। মসুর ডালের চাহিদা ৬ লাখ টন। রমজানে চাহিদা ১ লাখ টন। দেশে উৎপাদিত হয় ২ দশমিক ২ লাখ টন। পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টন। রমজানে চাহিদা ৪ লাখ টন। দেশে উৎপাদিত হয় ২৭ দশমিক ৩০ লাখ টন। ছোলার চাহিদা দেড় লাখ টন। রমজানে চাহিদা ১ লাখ টন। দেশে উৎপাদন হয় দশমিক ৪৬ টন। দেশে বছরে ১ লাখ টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রমজানেই চাহিদা ৫০ হাজার টন।ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে।