রেলের দুটি প্রকল্পের ব্যয় ও সময়ে পরিবর্তন আসছে। অবশ্য এ দুটি প্রকল্প উদ্বোধন হয়েছে ২০২৩ সালে। এবার প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হচ্ছে। আর কিছু ক্ষেত্রে খরচে পরিবর্তন আসছে। কমছে ব্যয়ের পরিমাণও। আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী; কিন্তু কোনো ট্রেন চালু হয়নি। এখন দাতা সংস্থার ঋণেও পরিবর্তন আসছে।জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২০ জুলাই আখাউড়া-লাকসাম রেলপথের উদ্বোধন করা হয়। ওই বছরের ১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ। এবার প্রকল্প দুটির ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজালে (ডিপিপি) সংশোধন করতে হচ্ছে। এ নিয়ে গতকাল সকালে পরিকল্পনা কমিশনে বৈঠক হয়। সেখানে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ব্যয় কমবে বিভিন্ন উপখাতে। আর প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে।এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, প্রকল্প দুটির ডিপিপি সংশোধন করা হবে। বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে সংশোধনীর প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে পিইসি বৈঠকে।জানা গেছে, বাংলাদেশের ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার সঙ্গে ভারতের আগরতলা রেলপথটি যুক্ত করতে প্রকল্প নেওয়া হয় ভারতীয় অনুদানে। আখাউড়ার গঙ্গাসাগর স্টেশন থেকে ভারতের আগরতলার নিশ্চিন্তপুর স্টেশন পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনায় এ প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আজও ট্রেন চলেনি এ পথে। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। এরপর ধাপে ধাপে পাঁচবার মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার নতুন করে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হয়েছে। ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ ১৮ হাজার টাকার এ প্রকল্পটির খরচ এখন ধরা হচ্ছে ৩১৮ কোটি ৫২ লাখ ৫১ হাজার টাকায়। এর ফলে ১৫৯ কোটি ২৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা খরচ কমছে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে ভারত সফরকালে প্রকল্পটির প্রস্তাব আসে। বর্তমানে ভারত থেকে আগরতলা হয়ে চিকেন নেক দিয়ে কলকাতা বন্দরে পৌঁছাতে ১ হাজার ৬৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণের ফলে মাত্র ৪০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কলকাতা যাওয়া সম্ভব। মূলত এ কারণেই প্রকল্পটি নেওয়া হয়। সমস্যা হচ্ছে, ঢাকা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেললাইনটি মিটারগেজের। তাই ভারতের সঙ্গে আগরতলা রেললাইন দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা সম্ভব নয়। পণ্যবাহী ট্রেনও চালু হয়নি পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাবে। এ রেলপথে কবে ট্রেন চলবে, তা কেউই সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না।এদিকে ২০২৩ সালে উদ্বোধন হওয়া আখাউড়া-লাকসাম রেলপথ প্রকল্পটির দাতা সংস্থার অর্থঋণে পরিবর্তন আসছে। এডিবির অর্থছাড়ের মেয়াদ শেষ। তাই ইআইবি থেকে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ প্রকল্পটিতে ৬ হাজার ৫০৪ কোটি ব্যয় ধরা হয় মূল ডিপিপিতে। এরপর প্রথম সংশোধনীতে খরচ ধরা হয় ৫ হাজার ৫০৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এবার খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। এতে ৫১৮ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে। এডিবির ঋণচুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই অবশিষ্ট প্রকল্প ঋণ ইআইবি থেকে নেওয়া হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ঋণ ৩ হাজার ২৫৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা এডিবি এবং ১ হাজার ৩৭১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ইআইবি থেকে নেওয়ার কথা। এডিবি ঋণচুক্তির মেয়াদ ২০২৩ সালের জুনের পর বাড়ায়নি। ফলে ডিপিপিতে বরাদ্দকৃত ২ হাজার ৮২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকার মধ্যে ২৩১ কোটি টাকা অব্যবহৃত রেখেই এডিবির ঋণের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অন্যদিকে রেলওয়ে স্থাপনার জন্য ইআইবির ১ হাজার ৯৯ কোটি ৯ লাখ টাকার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৬৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ৩৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা অবশিষ্ট আছে। এখন অর্থায়নের ধরন পরিবর্তনের প্রয়োজন। প্রকল্পের মেয়াদ এ বছরের জুন পর্যন্ত ধরা হয়েছে। গতকালের বৈঠকে এতে সম্মতি দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।