মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠিত হবেবাংলাদেশে ভূ-কম্পন অনুভূতকানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগখালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা ঘিরে শাহজালালে কঠোর নিরাপত্তা ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেল আরও ৮৮ ফিলিস্তিনির
No icon

পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন

নতুন পাঠ্যবই পেতে শুরু করেছে সারাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম প্রকাশিত এসব বইয়ে বিষয়বস্তুর পাশাপাশি বড় পরিবর্তন এসেছে আধেয়তে (কনটেন্ট)। শিক্ষার্থীদের হাতে যাওয়া পাঠ্যবই বিশ্লেষণে দেখা যায়, নতুন নতুন গল্প-কবিতা যুক্ত করায় বাদ পড়েছে অনেক কিছু। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার লেখাও বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে ইতিহাস বর্ণনায়। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জীবনী ও কর্মকাণ্ড নিয়ে আধেয় থেকে ঝেড়ে ফেলা হয়েছে অতিরঞ্জিত ইতিহাস। রাজনীতিকদের সম্মান দেওয়া হয়েছে ব্যক্তি-বন্দনা কমিয়ে।জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানায়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন শিক্ষাক্রম স্থগিত করে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে পরিমার্জিত বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে এনসিটিবির ৪১ বিশেষজ্ঞ ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করেছেন।পাঠ্যপুস্তকের পেছনে থাকা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তাঁর উদ্ধৃতি এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি ও নানা স্লোগান সংযুক্ত করা হয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বাদ পড়েছে। স্থান করে নিয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিষয় ও নতুন কিছু গল্প-কবিতা।
পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের আমরা তোমাদের ভুলব না প্রবন্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ছবি যুক্ত করা হয়েছে। ছাপা বইয়ে নাহিয়ান নামে এক শহীদ ছিলেন। বিতর্ক দেখা দিলে এনসিটিবি তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া পাঠ্যবইয়ের অনলাইন সংস্করণে নাহিয়ানের জায়গায় শহীদ নাফিসার নাম যুক্ত করেছে।তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে আমাদের চার নেতা নামে নতুন অধ্যায় সংযোজন করা হয়েছে। একাত্তরের ইতিহাসের নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর অবদান স্থান পেয়েছে। ছবিসহ তাদের প্রত্যেকের সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আর রাজনীতিতে নারী শীর্ষক প্রবন্ধে যুক্ত হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।সেলিনা হোসেনের পাঁচটি, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের দুটি, সৈয়দ শামসুল হকের একটি, রোকনুজ্জামান খানের একটি, নির্মলেন্দু গুণের একটি ও সাবেক আমলা কামাল চৌধুরীর একটি লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিক স্তরে পরিবর্তন প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে এ বছর সাতটি গদ্য-পদ্য বাদ দেওয়া হয়েছে। বিপরীতে যুক্ত করা হয়েছে নতুন আটটি গদ্য-পদ্য। তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী তুলে দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে জাতীয় চার নেতার জীবনী। বাদ গেছে শেখ রাসেলকে নিয়ে লেখা ইংরেজি গদ্যও।প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত হয়েছে পিঁপড়া ও পায়রার গল্প। ৪১ নম্বর পৃষ্ঠায় এ কারের উদাহরণে রোদের তেজের পরিবর্তে মেঘের ছবি দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় অধ্যায়ের নাম বদলে করা হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ।সেখানে শুরুতে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের একটি দৃশ্য। ৭ মার্চের ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা উল্লেখ থাকলেও এখন তা বাদ দেওয়া হয়েছে।অনেক অধ্যায়ে উদাহরণের পর একই জিনিসের পরিচয় আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। যেমন অ-তে অশোক ফুল ফুটেছে ভাই। এরপর লেখা, অশোক একটি ফুলের নাম। আগে লেখা ছিল শৈবাল ভাসে। এখন সেটি নদীতে শৈবাল ভাসে করা হয়েছে। বিভিন্ন অধ্যায়ে সংক্ষিপ্ত লেখাকে বোঝার সুবিধার্থে বড় করা হয়েছে।দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত হয়েছে সিংহ আর ইঁদুরের গল্প। শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর লেখা সোনার ছেলে বাদ দিয়ে যোগ করা হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ওপর দুখু মিয়ার জীবন । পহেলা বৈশাখ গদ্য করা হয়েছে নববর্ষ । বইয়ের ২৪ নম্বর পৃষ্ঠায় পদ্মা সেতুর ছবি পরিবর্তন করা হয়েছে। নববর্ষ অধ্যায়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার ছবি বাদ দিয়ে নববর্ষের অন্য ছবি যুক্ত করেছে। তবে ইংরেজি ও গণিত বইয়ে তেমন পরিবর্তন পাওয়া যায়নি।তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে সংযোজন হয়েছে ঘাসফড়িং ও পিঁপড়ার গল্প এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলেবেলা । বাদ গেছে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গদ্য সেই সাহসী ছেলে । বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে আমাদের জাতির পিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে স্থান পেয়েছে জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে লেখা আমাদের চার নেতা । ইংরেজি বইয়ের শেষ অধ্যায়ে লেখা গদ্য অ্যা ওয়ান্ডারফুল বয় বাদ গেছে। এতে শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে শেখ রাসেলের জীবনী ছিল।