সরকারি চাকরির আবেদন ফি পুনর্নির্ধারণদেশ গড়ার দায়িত্ব তরুণদের হাতে তুলে দিতে চাইশহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটির’ ডাক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের৪৩তম বিসিএসের নতুন প্রজ্ঞাপন জারি, ফের বাদ ১৬৮ জনইথিওপিয়ায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৬৬
No icon

জনপ্রিয় হচ্ছে পরিবেশবান্ধব পর্যটন

পাহাড়-সমুদ্র আর নদী-বনের মেলবন্ধন কক্সবাজার। জেলা শহরে গেলে বোঝার উপায় নেই এটা টিলাভূমি। একের পর এক পাহাড় কাটা পড়েছে, গড়ে উঠেছে অন্তত পাঁচশ হোটেল-মোটেল। এত কিছুর পরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি পর্যটন। মাঝখান থেকে ক্ষতি হয়েছে স্থানীয় মাটি, মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের। পরিবেশের ক্ষতি করে এমন জীবিকা পৃথিবীজুড়ে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখাচ্ছে পরিবেশবান্ধব (ইকো) পর্যটন।কক্সবাজার শহরে ২০০০ সালের পর থেকে অধিকাংশ হোটেল-মোটেল গড়ে ওঠে। ফলে ৬০ শতাংশ পাহাড় এরই মধ্যে কাটা পড়েছে। এসব হোটেল-মোটেলে দিনে প্রায় দেড় লাখ পর্যটক থাকতে পারেন। সাধারণত হোটেল-মোটেলে প্রচুর প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যবহার করা হয়। নেই নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বেশির ভাগ পয়োবর্জ্য বাঁকখালী নদীতে অথবা সাগরে ফেলা হয়। বাকি সব তরল বর্জ্যও ফেলা হয় খাল বা সাগরে। আর কঠিন বর্জ্য ফেলা হয় যত্রতত্র, ড্রেনে বা রাস্তায়। সব মিলিয়ে এসব হোটেল-মোটেল পরিবেশের সর্বনাশ করছে।পরিবেশের কথা মাথায় রেখে ইতোমধ্যে এই জেলায় গড়ে উঠেছে অন্তত ১০টি ইকো রিসোর্ট। এসব রিসোর্ট সাধারণত শহরের বাইরে। গ্রামীণ পরিবেশে বাঁশ, কাঠ ও শন দিয়ে তৈরি। এগুলো তৈরিতে পরিবেশের ক্ষতি করে এমন উপাদান ব্যবহার করা হয় না। দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয় পচনশীল পণ্য। এদের রয়েছে নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। তরল বর্জ্য খাল বা সমুদ্রে ফেলা হয় না। আর কঠিন বর্জ্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পৌঁছে দেওয়া হয় পৌরসভায়।

এমন একটি পর্যটন কেন্দ্র মারমেইড ইকো রিসোর্ট। এর অবস্থান পেঁচারদ্বীপে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফগামী মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে এগোলে পশ্চিম পাশে রেজু খাল ঘেঁষে চোখে পড়বে এই রিসোর্টটি।সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, মেরিন ড্রাইভ সড়কের ঢাল বেয়ে নিচে নামলে কানে আসে পাখির কলরব। দুই পাশের জলাধারে ঝিকমিক করে ভরদুপুরের রোদ্দুর। অভ্যর্থনা কক্ষে পর্যটকরা প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে কর্মীরা রঙচঙে বুনোফুলের গুচ্ছ তুলে দেন হাতে। সঙ্গে দেওয়া হয় অভ্যর্থনা পানীয় হিসেবে ডাবের পানি।এ রিসোর্টের কক্ষগুলো বাইরে থেকে স্রেফ কুটিরের মতো দেখায়। ভেতরে গেলে দেখা যায়, আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। স্নানঘরে ঢুকলে মুহূর্তে মন ভালো হয়ে যায়। প্লাস্টিকের বোতলভর্তি বাজারি শ্যাম্পুর বদলে কাচের পাত্রে ভেষজ শ্যাম্পু। সেটা আবার সবুজ গাছের পাতা দিয়ে ঢাকা। গুঁজে দেওয়া আছে দুই পাশে দুটো জীবন্ত গোলাপ। সাবান রাখা হয়েছে নারকেলের খোলের মধ্যে।রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো জিনিস মারমেইড ইকো রিসোর্টে ব্যবহার করা হয় না।মারমেইড ইকো-রিসোর্টের সিনিয়র ব্যবস্থাপক রক্সি ডমিনিক গোমেজ জানান, প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে এ রিসোর্টের সব বাংলো তৈরি করা হয়েছে। ইয়োগা সেন্টার, স্পা, নৌকা ভ্রমণ, সম্মেলন কক্ষ, প্রেক্ষাগৃহ সবকিছুর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২০ একর জমির ওপর ২০০৫ সালে এ রিসোর্টের নির্মাণ কাজ শুরু হলেও সম্প্রসারণ হয় ২০১০ সালে।

মারমেইড ইকো-রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের এই রিসোর্ট বাঁশ, কাঠ ও শন দিয়ে তৈরি। তবে এখানে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বর্তমানে ৩৪টি কক্ষে ৮৫ জন অতিথি থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।মারমেইডের উত্তর পাশে গড়ে তোলা হয়েছে মুননেস্ট নামের আরেকটি ইকো-রিসোর্ট। বঙ্গোপসাগর ও রেজু খালের তীরে নির্মিত এটি।এখানে ৭টি কক্ষ রয়েছে। এর মালিক জহিরুল হক চৌধুরী শাহিন বলেন, প্রায় এক একর জমির ওপর নির্মিত এই রিসোর্টে ১৪ জন অতিথি থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ২০০৭ সালে এ রিসোর্টের নির্মাণকাজ শুরু হলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় শেষ হয়েছে এক বছর আগে। কক্সবাজারে প্রতিবছর যে লাখ লাখ পর্যটক ঘুরতে আসেন, তাদের কাছে ইকো পর্যটনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকের কাছে। তাদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বেশি কাজ করে। কিন্তু কক্সবাজারে ইকো পর্যটন বিকাশে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যায় না।মুননেস্টের পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে ক্যাম্পেইন কক্স নামে আরেকটি ইকো রিসোর্ট। এখানে তাঁবু ভাড়া নিয়ে দল বেঁধে কম খরচে থাকার সুযোগ রয়েছে।শুধু মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে নয়, কক্সবাজার শহরেও ইটপাথরের দালানের ফাঁকে নির্মিত হচ্ছে ইকো রিসোর্ট। এরকমই ডিভাইন ইকো রিসোর্ট। এটি শহরের ডিভাইন পয়েন্টে সৈকত ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে। এর মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী শাওন বলেন, কক্সবাজারে দালানকোঠার বাইরে গিয়ে ইকো পর্যটন গড়ে তোলা অনেক চ্যালেঞ্জের বিষয়। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমর্থন, প্রশাসনের সহযোগিতা না পেলে অনেক কঠিন হয়ে যায়। কারণ কক্সবাজারে যেসব বিদেশি পর্যটক আসেন, তাদের অধিকাংশ দালানকোঠার বাইরে গিয়ে ইকো রিসোর্টে থাকতে চান।ঢাকার গুলশান থেকে মারমেইড ইকো রিসোর্টে সপরিবারে আসা ব্যবসায়ী হামিদ হোসেন বলেন, এ রিসোর্টে নাগরিক কোলাহল কিংবা হাঁকডাক নেই। দুপুরের রোদ মরে এলে কুটিরের সামনের বাঁশের বেঞ্চে গা এলিয়ে দিয়ে বসলে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। এ সময়টা নৌকা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার জন্যও বেশ ভালো। বাংলোর সারি আর নারকেল গাছ পেরিয়ে হেঁটে গেলে রেজু খাল দেখা যায়। এ জায়গাটি সত্যিই মন ভালো করে দেওয়ার মতো।