চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং খুনিদের বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামসহ সারাদেশ। চট্টগ্রাম আদালতে নথিপত্রে বিক্ষুব্ধরা আগুন দিয়েছে। পাশাপাশি দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন আইনজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী।এসব কর্মসূচি থেকে আলিফ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ইসকনকে নিষিদ্ধের জোর দাবি জানানো হয়। না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে বিনষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে সরকার ও দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়।বিক্ষুব্ধ আলেমরা মাদারীপুরের শিবচরে ইসকন কার্যালয় বন্ধ করে দেন। সহকর্মী খুনের ঘটনায় চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি আজ বৃহস্পতিবারও আদালত বর্জনসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে।এদিকে চার দফা জানাজা শেষে গতকাল চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে আলিফের দাফন সম্পন্ন হয়। তাঁর লাশ গ্রামে নেওয়ার পর কান্নার রোল পড়ে যায়। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। মরহুমের জানাজায় ঢল নামে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের।গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় আইনজীবী আলিফকে (৩৫) হত্যা করা হয়। এ জন্য ইসকন কর্মীদের দায়ী করেছেন আইনজীবীরা।
ইসকন নিষিদ্ধের দাবি সারজিস-হাসনাতের
দ্রুত সময়ের মধ্যে ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আলিফ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিও জানিয়েছেন তারা।বুধবার দুপুরে নগরের টাইগারপাস মোড়ে আয়োজিত শোক এবং সম্প্রীতি সমাবেশে এসব দাবি জানান তারা। এ সময় ভারতে বসে শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে নিয়ে সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ইসকন জঙ্গি, স্বৈরাচারের সঙ্গী বলে স্লোগান দেন। নগরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করার কারণে চারপাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।সারজিস আলম বলেন, দেশের সাধারণ সনাতনীরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনার দালালরা ইসকনকে উস্কে দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। যে রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ভারতের কিছু প্রেতাত্মাও উস্কানি দেয়। ছোটখাটো কিছু জঙ্গি ইসকনকে দেশছাড়া করা আমাদের জন্য হাতের ময়লা। কোনো উগ্রবাদী সংগঠনকে বাংলাদেশে কোনো জায়গা দেওয়া হবে না।হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের এজেন্ট হিসেবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে ইসকন। উগ্র হিন্দুত্ববাদী এই জঙ্গি সংগঠন আলিফ ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ভারতে বসে স্বৈরাচার হাসিনা যত ষড়যন্ত্র করুক না কেন, আমরা রুখে দেব। বাংলাদেশে সব ধর্মের সহাবস্থান থাকবে। ধর্মের নামে উগ্রবাদের ঠাঁই নেই এখানে। অবিলম্বে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আদালতে নথিপত্রে আগুন
ইসকনকে সহায়তার অভিযোগে গতকাল চট্টগ্রাম আদালতের ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের অফিসের (মুন্সি সমিতি) নথিপত্রে আগুন দিয়েছেন ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। দুপুরে আদালতের প্রবেশমুখে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার উল্টো পাশে ওই সমিতির অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। অগ্নিসংযোগের ফলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি পুড়ে যায়। কয়েকজন মুন্সি জানান, আইনজীবীরা সমিতির কাগজপত্র জ্বালিয়ে দিয়েছেন। সমিতির কিছু সনাতনী ভাই ইসকনের পক্ষে পোস্ট দিয়েছিল। এ নিয়ে মুসলিম আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে এ কাজ করেছেন।এদিকে আইনজীবী হত্যাকে কেন্দ্র করে আদালতপাড়ার চারপাশে গতকাল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হত্যাকাণ্ডের পর গত মঙ্গলবার রাত থেকে নগরের ওষুধের বড় পাইকারি মোকাম হাজারী গলিসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি মার্কেটে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে আতঙ্কে গতকালও হাজারী গলির বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। এতে বিভিন্ন স্থান থেকে ওষুধ কিনতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা ভোগান্তিতে পড়েন।