মালয়েশিয়ার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য চায় বাংলাদেশসড়ক দুর্ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিহতফের ১০ ডিগ্রির নিচে পঞ্চগড়ের তাপমাত্রাউদ্বোধনের পর এবার রেল প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিউভয় সংকটে পুলিশ
No icon

কত মানুষ নিহত এখনও অজানা

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় এ পর্যন্ত কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এর সঠিক সংখ্যা এখনও অজানা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সোমবার পর্যন্ত ১৫০ জনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল, নিহতের সংখ্যা অন্তত ২৬৬। অন্যদিকে একটি মানবাধিকার সংগঠনের ধারণা, নিহত ২৫০ জনের কম নয়। আর ১৬ থেকে ২১ জুলাইয়ের এ সংঘাতে ২০৮ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে। তবে সব হাসপাতাল এবং এলাকার তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। কোনো কোনো পরিবার দাবি করেছে, তাদের স্বজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।নিহত ২০০ জনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাভারে চারজনসহ ঢাকা জেলায় সর্বোচ্চ ১৩৬ জন নিহত হয়েছেন। উত্তরা-আজমপুর, যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া ও রামপুরা-বাড্ডায় সংঘর্ষ চলাকালে তারা গুলিতে প্রাণ হারান।প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারীদের তথ্যানুযায়ী, পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করেছিল।  অনুসন্ধান অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২১ জুলাই এই চার দিনে নারী-শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের হতাহত কয়েক হাজার ব্যক্তিকে নেওয়া হয়েছিল রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে। তাদের অধিকাংশই ছিলেন গুলিবিদ্ধ। ১৮ ও ১৯ জুলাই আসা আহতদের বড় অংশই ছিলেন ছররা গুলিবিদ্ধ; ২০ ও ২১ জুলাই আসা আহত বেশির ভাগই ছিলেন বুলেটবিদ্ধ।

নারায়ণগঞ্জে ১৬, নরসিংদীতে ১৩, গাজীপুরে ৭, রংপুরে ৭, চট্টগ্রামে ৭, ময়মনসিংহে ৫, মাদারীপুরে ৩, সিলেটে ২ এবং বগুড়া, চাঁদপুর ও সিরাজগঞ্জে একজন করে নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৫ জন ছিল ৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী, অর্থাৎ শিশু।নিহতের বড় সংখ্যাই তরুণ। ১৯ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১০৪, ৩১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৩৫ এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী ছিলেন চারজন। ২২ জনের বয়স জানা যায়নি। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থী ছিলেন ৫০ জন। এর মধ্যে শিশু শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও রয়েছেন।নিহত ৪১ জন ছিলেন শ্রমিক ও কর্মচারী। তাদের অধিকাংশ রিকশাচালক, হকার কিংবা দোকান কর্মচারী। চিকিৎসক, ব্যাংকার ও পেশাজীবী ছিলেন ১২ জন। পেশা জানা যায়নি ৮২ জনের। তিন পুলিশ ও এক আনসার সদস্যও নিহত হয়েছেন। সাংবাদিক নিহত হয়েছেন চারজন।সর্বোচ্চ ৯৯ জনের লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজে। তাদের সবাই ছিলেন গুলিবিদ্ধ। বাড্ডার এএমজেড হাসপাতালে ২৩, রামপুরার ফরাজী হাসপাতালে ১৫, সোহরাওয়ার্দীতে ১৩, কুয়েত মৈত্রীতে ৬, উত্তরার আধুনিক হাসপাতালে ৬ ও নিউরোসায়েন্সেসে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে  ।

সোহরাওয়ার্দীর ১৩ জনের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নাম-পরিচয় না পাওয়া ২১ জনকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। তাদের মরদেহে গুলি এবং গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিল। রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলায় ১২৫ জনকে দাফন ও সৎকারের খবর পেয়েছে ।আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সাল   বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সব হাসপাতালে এখনও যেতে পারিনি।যতটুকু তথ্য পেয়েছি, তাতে নিহতের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। নিহতের সংখ্যা ন্যূনতম ২৫০ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের ঘোষণা রয়েছে, সব হত্যার বিচার হবে। এ প্রসঙ্গে ফারুক ফয়সাল বলেন, বিচার নিশ্চিত করতে নিহতের সঠিক সংখ্যা জানা প্রয়োজন।হতাহতের তদন্তে সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করেছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানিয়েছেন, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৫৩ হত্যা মামলা হয়েছে। কিছু মামলায় বাদী হয়েছে নিহত ব্যক্তির পরিবার, কিছু মামলার বাদী পুলিশ।১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহত হন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি, সেদিন সাতজন মারা গেছেন। পরের দিন ১৭ জুলাই প্রাণহানি হয়নি।  তথ্যানুযায়ী, ১৮ জুলাই অন্তত ৪১ জন নিহত হন। পরদিন নিহতের সংখ্যা ৬২ প্রকাশিত হয় সমকালে। পরে জানা যায়, সেদিন অন্তত ৮৫ জনের প্রাণ গেছে গুলিতে। ২০ জুলাই অন্তত ৪০ জনের এবং ২১ জুলাই ২৭ জন নিহত হন। চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে পরের দিনগুলোতে। অধিকাংশ প্রাণহানি রাজধানীতে হলেও তাদের বিভিন্ন জেলায় দাফন করা হয়।বরিশাল ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, নিহত ৫২ জনের বাড়ি বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায়। তাদের ৪৯ জন ঢাকায়, দু জন চট্টগ্রাম ও মাদারীপুরে মারা গেছেন। নিহতদের পাঁচজন শিক্ষার্থী। দু জনের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া গেছে।