বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিলব্রিটিশ পার্লামেন্টে আবারও আলোচনায় বাংলাদেশ পরিস্থিতিদেশের সব দলকে নিয়ে ‘জাতীয় ঐক্যের’ ডাক বিএনপিরতিন সমন্বয়ক ডিবি হেফাজতেকোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতি খোলা চিঠি মুক্তিযোদ্ধাদের
No icon

স্বস্তিদায়ক অবস্থানে নেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত

২০১০ সালের পর সরকার ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে প্রায় প্রতি অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়িয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকার খাত হিসেবে অর্থ বরাদ্দের কারণে গত এক দশকে বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে কয়েকগুণ। জ্বালানি খাতের প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নয়ন না হলেও দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। বিদেশ থেকে তেল, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি আমদানি বেড়েছে বহুগুণ। তবে এতকিছু করার পরও এখনো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত স্বস্তিদায়ক অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি। প্রায় প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। শিল্পে গ্যাসের জোগান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে বিনিয়োগে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।এদিকে অর্থ সংকটের কারণে জ্বালানি সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ। এ অবস্থায় নতুন বাজেটে জ্বালানি খাতে অর্থ বরাদ্দ কমেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাতে অর্থ বরাদ্দ কমে যাওয়া মানে সাধারণ মানুষের ওপর আর্থিক চাপ বাড়বে। প্রয়োজনীয় অথের্র সংস্থান করতে সরকার দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়াবে। ইতিপূর্বে প্রতিবছরই ভর্তুকি কমাতে দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে। যার প্রভাব আর্থ-সামাজিক জীবনের ওপর পড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। নতুন বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত মিলে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে জ্বালানি খাতে মাত্র ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা, আর বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। গত অর্থবছর এই বরাদ্দ ছিল ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। যদিও পরে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় এবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ কমেছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চলমান সংকটের বিষয়টি প্রকৃত অর্থে সরকারের কোনো সংস্থা চিহ্নিত করছে না। সরকার গতানুগতিক পদ্ধতিতে চলছে। এখন বিদ্যুৎ খাতে কোনো বরাদ্দ না রাখলেও চলে, সেখানে রাখা হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকা। আর যেখানে অনেক বেশি বরাদ্দ রাখা দরকার সেখানে রাখা হয়েছে মাত্র এক হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ জ্বালানি খাতে কোনো বরাদ্দ নেই বললেই চলে। অথচ বলা হচ্ছে প্রায় ১৫০ কূপ খনন করা হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে যে সঞ্চালন লাইন রয়েছে, যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলো পরিপূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ না রাখলেও চলে। অথচ বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ রেখে জ্বালানিতে বরাদ্দ রাখছে না।

শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে টাকা মূলত ভর্তুকি ক্যাপাসিটি চার্জ আর ঠিকাদারদের পরিশোধে যাবে। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত গত এক-দুই দশক আগে যে পরিস্থিতির মধ্যে ছিল, আবার সেখানে যাবে। অন্যদিকে পরিকল্পনাহীন বরাদ্দ ও উন্নয়নের ফলে মানুষের ওপর চাপ বাড়াবে সরকার। ভর্তুকি কমানোর নামে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলবে।এদিকে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলছেন, এখন প্রকৃত অর্থে জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বেশি দরকার। অথচ এ খাতে বরাদ্দ নেই বললেই চলে। অথচ পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি বিভাগ এলএনজি আমদানি কম করার লক্ষ্য দেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দেওয়ার কথা বলছে। সরকার একাধিক প্রকল্প নেওয়ার কথা বলেছে। আগে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে টাকা নিয়ে গ্যাস অনুসন্ধান করা হতো। এলএনজি আমদানিতে খরচ করে এখন সেই তহবিল অনেকটা ফাঁকা। তাই জ্বালানি খাতে সরকারি বরাদ্দ বাড়ানো দরকার ছিল, অথচ নেই। তিনি বলেন, প্রকৃত অর্থে নীতিনির্ধারণী মহল থেকে গ্যাস অনুসন্ধানের কথা বলা হলেও নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধানে তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই এমনটাই মনে করছেন তারা। ফলে একদিকে বলা হচ্ছে গ্যাস অনুসন্ধান করতে; অন্যদিকে শতভাগ এলএনজি আমদানির সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।