আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক আজ সর্বজনীন পেনশনের নিবন্ধন এক লাখ ছাড়াল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্কুল-মাদরাসা বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের নির্দেশমহাবিপদ এড়াতে এখনই সাজাতে হবে পরিকল্পনা ২৭ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধ থাকবে আজ
No icon

তীব্র গরমে হাসপাতালে বাড়ছে শিশু রোগী

চলতি এপ্রিলের শুরু থেকে সারাদেশে তীব্র গরমে ভয়াবহ সংকটে পড়েছে জনজীবন। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে হিট স্ট্রোকসহ জর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার রোগী। সব বয়সের মানুষ ভুগলেও এই গরম সবচেয়ে বেশি কাবু করেছে শিশুদের। আগামী সপ্তাহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে গেলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।রাজধানীর হাসপাতালগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ঈদুল ফিতরের পর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমিয়েছে মার্চের দ্বিগুণ রোগী। তাদের সিংহভাগ ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার রোগী। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা রেজা হোসেন-নাসরিন আক্তার দম্পতির একমাত্র মেয়ে জুনাইরা। ঈদের দুদিন আগে তীব্র জ্বরের পাশাপাশি বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। শুরুতে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানো হলে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় নেওয়া হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে।চিকিৎসায় জ্বর কমলেও অবনতি হয়েছে ডায়রিয়া পরিস্থিতির। উপায় না দেখে গত সোমবার মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৭ বছরের শিশুটিকে। গতকাল বুধবার বেলা ১২টার দিকে দেখা যায়, জুনাইরাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। পাশেই বসা মা নাসরিন বেগম। তিনি জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে জ্বর কখনো বাড়ে, কখনো কমে। তবে এই মুহূর্তে জ্বর নেই। বমি আর ডায়রিয়া যাচ্ছেনা। ডাক্তাররা স্যালাইন দিচ্ছেন। মেয়ে মুখে এখনো কিছুই নিচ্ছেনা।

একই হাসপাতালে ডায়রিয়া নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে খিলক্ষেত থেকে আসা আব্দুর রউফের তিন বছরের ছেলে আকাঈদ হোসেন। আব্দুর রউফ জানান, চার দিন ধরে প্রচণ্ড বমি ও পাতলা পায়খানা করছে ছেলে। স্যালাইন গুলিয়ে খাওয়ানো হয়েছে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছি। কিন্তু কোনোভাবেই উন্নতি না হওয়ায় মঙ্গলবার হাসপাতালে এনেছি।হাসপাতালটিতে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা জানান, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়ার রোগীর চাপ বাড়ছে। স্বাভাবিক সময়ে এ হাসপাতালে নিয়মিত ২শ থেকে ৩শ রোগী চিকিৎসাধীন থাকেন। বর্তমানে নিয়মিত ৫শ থেকে ৬শতে দাঁড়াচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে গতকাল বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীদের প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু।তবে ডায়রিয়ার মূল প্রকোপ এখনো শুরু হয়নি বলে মনে করেন আইসিডিডিআরবির (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) বিজ্ঞানী শোয়েব বীন ইসলাম। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশাপাশি গার্মেন্টস এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। অনেকটা ছুটির আমেজে আছে। স্কুল খুলে দিলে শিশুরা পানি থেকে শুরু করে বাইরের খাবারে ঝুঁকে পড়বে। এতে করে পানিবাহিত রোগের পাশাপাশি ডায়রিয়া দেখা দেবে। বিশেষ করে মাঠে যারা কাজ করেন তারা হিট স্ট্রোকের শিকার হবেন।ঢাকা শিশু হাসপাতালেও বেড়েছে ডায়রিয়া ও ঠাণ্ডাজনিত রোগী। জরুরি ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১ হাজার ২শর বেশি রোগী চিকিৎসা নেয় হাসপাতালটিতে। গতকাল বুধবারের আগের ২৪ ঘণ্টায়ও ১ হাজার ২০৫ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে চার শতাধিক ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিয়ে। অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশই ঠাণ্ডাজনিত রোগী।

এক মাসের বেশি সময় ধরে নিউমোনিয়ায় ভুগছে সাড়ে তিন মাসের শিশু আব্রাহাম। ১১ দিন শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হলে বাসায় পাঠানো হয়। কিন্তু বুধবার আবারও শ্বাসকষ্ট ও পানিশূন্যতা দেখা দিলে নেওয়া হয় হাসপাতালে। গতকাল দুপুর ২টায় শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে শিশুটিকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। মা ঈশিকা আক্তার জানান, জন্মের তেত্রিশ দিনের মাথায় নিউমোনিয়া ধরা পড়ে শিশুটির। মাঝে সুস্থ হলেও গরম বাড়ায় আবারও আগের মতো অবস্থা।শিশু হাসপাতালের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার আহমদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, তীব্র গরমে শিশুরা সবচেয়ে বেশি অসুস্থতার ঝুঁকিতে থাকে। বর্তমানে এ হাসপাতালে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগী বেশি আসছে। বিশেষ করে ঈদের পর উল্লেখযোগ্য হারে রোগী বেড়েছে।প্রতিষ্ঠানটির রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুজ্জামান (কামরুল) আমাদের সময়কে বলেন, তীব্র গরম শুরু হলে পানিবাহিত রোগ, ডায়রিয়া, জন্ডিস, হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যায়। এখন স্কুল বন্ধ রয়েছে, ফলে বাচ্চারা ঘরে থাকছে অধিক সময়ে। তারপরও রোগী বাড়ছে। তার মানে স্কুল খুলে দিলে এবং তাপমাত্রা আরও বাড়লে হিট স্ট্রোকের প্রভাবে সব ধরনের রোগী বৃদ্ধি পাবে। এতে শিশু ছাড়াও মাঠে-ময়দানে কাজ করা শ্রমিক, রিকশাওয়ালা সবচেয়ে বেশি কষ্টের শিকার হোন।