দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ বইছে, কিছু স্থানে বৃষ্টির আভাসযুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলবিএনপির আরও চার নেতাকে বহিষ্কারবিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুই প্রস্তুতি ম্যাচের সূচি ঘোষণা রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ল রিলাক্স পরিবহনের বাস, নিহত ৫ আহত ১৫
No icon

মহাবিপদ এড়াতে এখনই সাজাতে হবে পরিকল্পনা

প্রবল দহনে পুড়ছে দেশ। ঘরে-বাইরে কোথাও নেই একদণ্ড শান্তি। খরতাপে পোড়া শহরে আগের সেই কোলাহল নেই। মানুষের গিজগিজও দেখা মেলে না বহুদিন। যেন রোদের তেজের কাছে হার মেনেছেন সবাই। কৃষিতে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। উপকূলে শুকিয়ে গেছে পানি। হুমকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। সূর্যের প্রখর তাপে থার্মোমিটারে পারদ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই করছে। দেশের ইতিহাসে টানা ২৮ দিন তাপপ্রবাহের রেকর্ড অতীতে নেই।বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যে দিন যাচ্ছে, তা নিয়েই এতটা হাপিত্যেশ। সামনে আরও ভয়ংকর সময় অপেক্ষা করছে। প্রকৃতি বিরূপ হয়ে ওঠার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আছে মানবসৃষ্ট বহু কারণ। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, গাছপালা উজাড় ও জলাধার কমে যাওয়ার পাশাপাশি এল নিনো র প্রভাবে এ বছর উষ্ণতা বেড়েছে বলে মনে করেন তারা। প্রকৃতির এই রুদ্রমূর্তি থেকে বাঁচার কিছু উপায়ও বাতলে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এমন দুর্যোগের জন্য প্রকৃতিকে দায়ী করে যাওয়াটা কোনো বিশেষজ্ঞই সমর্থন করছেন না। তাপপ্রবাহের পেছনে তারা মানুষের ভূমিকা দেখছেন। জলাশয় ধ্বংস থেকে শুরু করে অবিরাম কার্বন নিঃসরণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ অনেক কিছুই প্রকৃতিকে রুষ্ট করে তুলছে বলে মনে করেন তারা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি এই আন্তঃমহাদেশীয় বাতাসের চলাচল ও স্থানীয় পর্যায়েও তাপমাত্রা বাড়ার কারণে দেশজুড়ে এ বছর তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি। এ ছাড়া বাংলাদেশে এল নিনো জলবায়ু সংকটের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এল নিনোর প্রভাব বিষয়ে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, এল নিনো মধ্য ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি বায়ুপ্রবাহের একটি। এল নিনো বলতে মূলত উষ্ণায়নের অবস্থা বোঝায়। অন্যদিকে ‘লা নিনা’ বলতে বোঝায় এর শীতল অবস্থাকে। গত সেপ্টেম্বর থেকে এল নিনোর সক্রিয়তার কথা জানায় অস্ট্রেলিয়া ব্যুরো অব মেটেরোলজি। এর কারণে যে এবার বিশ্বজুড়েই তাপপ্রবাহ বাড়বে, তা আগে থেকেই সতর্ক করা হয়। গত ১৬ এপ্রিল এল নিনো শেষ হয়েছে বলে অস্ট্রেলিয়া ব্যুরো অব মেটেরোলজি জানিয়েছে। তবে শেষ হলেও এল নিনোর রেশ রয়ে গেছে। তাই এবার তাপপ্রবাহ বেড়েছে। এ ছাড়া এ বছর বৃষ্টি হয়েছে কম। এপ্রিলে মাত্র একটি বড় কালবৈশাখী হয়েছে। তিনি বলেন, সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। নগরায়ণের কারণে অস্বস্তিও বাড়বে। আমরা সেটি মাথায় রেখেই কাজ করছি।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, তাপপ্রবাহের তীব্রতা কম বা বেশি হওয়ার ওপর সেই স্থানের মানুষের নিয়ন্ত্রণ আছে। একই তাপপ্রবাহ ঢাকা শহরের পাশে অবস্থিত আড়িয়ল বিল এলাকার কিংবা পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের জন্য যতটুকু অস্বস্তি সৃষ্টি করবে, তার চেয়ে অনেক বেশি অস্বস্তি সৃষ্টি করবে ঢাকা শহরের মানুষের জন্য। যে এলাকায় খোলা জায়গা ও গাছপালা যত বেশি থাকবে, সেই এলাকায় মানুষ তাপপ্রবাহের ক্ষতিকর প্রভাব তত কম অনুভব করবে।