ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে লোক পাঠানো কিংবা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নারী ও শিশু পাচার সব ক্ষেত্রেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বেড়েছে। প্রযুক্তিকে নানাভাবে ব্যবহার করছে এই অপরাধীরা।বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নারী ও শিশু পাচার দমনে কাজ করতে গিয়ে তারা এই গবেষণা করে।ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের সহায়তায় পরিচালিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পাচারকারীরা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সংকটে থাকা পরিবারের শিশু-কিশোরীদের পাচারের জন্য টার্গেট করছে।আজ শনিবার বিশ্ব মানবপাচারবিরোধী দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে ব্র্যাক। দিবসটির প্রতিপাদ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও অপব্যবহার ।ব্র্যাকের গবেষণায় দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে পাচারের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টিকটকসহ নানা মাধ্যম অনেক বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে চাকরি কিংবা নায়িকা বা মডেল বানানোর কথা বলে কিশোরী-তরুণীদের নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁদের মানব পাচার চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।ব্র্যাক অভিবাসন শাখার তথ্য মতে, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যত মানুষ ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছে, বাংলাদেশ এখন সেই তালিকায় তৃতীয়। ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে অন্তত ১২ হাজার ৬৩৬ জন বাংলাদেশি এভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। আর গত এক যুগে অনিয়মিতভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন প্রায় ৬৫ হাজার বাংলাদেশি। এই পাচারের ক্ষেত্রেও সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যম ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষত ফেসবুকে লিবিয়া টু ইতালি নামের একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়েই মানবপাচারের ঝুঁকিতে থাকা মানুষগুলোকে চিহ্নিত, নিয়ন্ত্রণ ও তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিতে অপরাধীচক্র এখন প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক বিয়ে ও অন্যান্য নিপীড়নের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে শিশুদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর ঘটনাও দিনে দিনে বাড়ছে।ভারতে নারী পাচারের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে গত বছর ভারতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে পৈশাচিক নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর। এ ঘটনায় ভারতের পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে, যার মধ্যে রয়েছেন ঢাকার মগবাজারের বাসিন্দা রিফাদুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয়। এদিকে ঘটনার পর পুলিশ ও র;্যাব নারী পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে দুটি চক্রের ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে। শুধু এই দুই চক্র পাঁচ বছরে প্রায় দুই হাজার নারীকে ভারতে পাচার করেছে বলে পুলিশ ও র;্যাব দাবি করেছে।তবে বাংলাদেশ থেকে কত নারী ও শিশু ভারতে পাচার হয়, তার কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ভারতে পাচার হওয়া প্রায় দুই হাজার নারীকে ১০ বছরে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচি পাচারের শিকার ৬৭৫ জন নারীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৬ থেকে ২০ বছরের কিশোরী-তরুণীরা সবচেয়ে বেশি পাচারের শিকার হয়। এরপরই আছে ১১ থেকে ১৫ বছরের কিশোরীরা।পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন হওয়ার পর শুধু ওই আইনেই সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি মামলা হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ মামলারই কোনো নিষ্পত্তি হয়নি।