নির্দিষ্ট কোনো নায়ক নেই; জ্যামাইকা টেস্টে বাংলাদেশের একেক ক্রিকেটার অবদান রাখলেন ম্যাচের একেক মুহূর্তে, দলের চাহিদা পূরণ করেছেন আলাদা-আলাদাভাবে। সাদমান ইসলাম, নাহিদ রানা ও জাকের আলীদের বীরত্বের ঝান্ডা শেষটায় ওড়ালেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। স্যাবাইনা পার্কে তার স্পিন বিষে পুড়েই খাক স্বাগতিক উইন্ডিজ ব্যাটাররা। অসহায় আত্মসমর্পণ করে দলটি হার দেখেছে ১০১ রানে।ম্যাচের প্রথম ইনিংসে সাদমানের হাফ সেঞ্চুরি সত্ত্বেও ১৬৪ রানেই অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে নাহিদ রানার গতির আগুনে পুড়ে ১৪৬ রানেই থামে ক্যারিবিয়ানরা। ১৮ রানের লিড নিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৮ রানের শক্ত সংগ্রহ তোলে বাংলাদেশ। তাতে উইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮৭ রানের। ম্যাচের পরিস্থিতি ও কন্ডিশন বিবেচনায় এটি ছিল প্রায় অসম্ভব লক্ষ্য। এটাকে আর সম্ভব করতেও পারেনি স্বাগতিকরা। ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে উইন্ডিজকে ১৮৫ রানেই অলআউট করে দেন তাইজুল। তাতে বিশাল জয় পায় মেহেদী হাসান মিরাজের দল। দুই ম্যাচের সিরিজের শেষটায় বাংলাদেশ জেতায় সিরিজ ড্র হলো ১-১ ব্যবধানে।
দুর্দান্ত এই জয়ে ১৫ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশের একটি অপেক্ষার পালা ফুরোল। ২০০৯ সালে গ্রানাডায় খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সবশেষ হারিয়েছিল টাইগাররা। এবার ১৫ বছর পর এল এই জয়। এ ছাড়া দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতল ৬ বছর পর। তাতে জয় দিয়েই ২০২৪ সালের টেস্ট অভিযান শেষ করল বাংলাদেশ।ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানে গুটিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯৩ রান তুলে ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনের মতো চতুর্থ দিনেও সাহসী ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। যার পুরোধা ছিলেন জাকের। চতুর্থ দিনে ৫ উইকেট হারিয়ে ৭৫ রান করে বাংলাদেশ, যার মধ্যে জাকেরের একারই ৬২ রান। ৮০ বলে ফিফটি করা জাকের শেষ পর্যন্ত থেমেছেন ৯১ রান করে। ১০৬ বলের ইনিংসে ৮টি চারের পাশাপাশি ছিল ৫টি বিশাল ছক্কার মার। তার এই বিস্ফোরক ব্যাটিংয়েই ২৬৮ রানের পুঁজি তুলে উইন্ডিজের সামনে ২৮৭ রানের বড় লক্ষ্য দিতে পারে বাংলাদেশ।
চ্যালেঞ্জিং এই লক্ষ্যে শুরুটা মন্দ করেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩ উইকেট হারিয়েই শতরান করে ফেলেছিল দলটি। তবে তাইজুলের স্পিন তোপের পাশাপাশি তাসকিন-হাসান মাহমুদের পেসে আর টিকতে পারেনি ক্যারিবিয়ানরা। ১৮৫ রানে অলআউট হয়ে হার দেখে ১০১ রানের বিশাল ব্যবধানে। তাইজুলের ৫ উইকেটের পাশাপাশি তাসকিন ও হাসান দুইটি ও নাহিদ রানা নেন এক উইকেট।ক্যারিয়ারে এই নিয়ে ১৫ বার ইনিংসে ৫ উইকেটের দেখা পেলেন তাইজুল। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা এই বাঁহাতি স্পিনারই। আর যৌথভাবে সিরিজসেরা হয়েছেন বাংলাদেশের পেসার তাসকিন (১১ উইকেট) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেডন সিলস (১০ উইকেট)।