
অস্থিতিশীলতা নিরসনে করণীয় নির্ধারণে ১৩ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠকে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য দৃশ্যমান করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠকে দলগুলো সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করেছে।গোপালগঞ্জের সহিংসতায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা, স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের মৃত্যু, সচিবালয়ে ঢুকে পড়া শিক্ষার্থীদের পুলিশের পিটুনি নিয়ে দলগুলোর নেতারা সরকারপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেন। এনসিপির রাজনৈতিক কার্যক্রমে সরকারের সম্পৃক্ততা আছে কিনা এ প্রশ্নও তোলেন।মঙ্গলবার রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। সেদিনও সরকারের ব্যর্থতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, গোয়েন্দা তথ্য ঘাটতি নিয়ে আলোচনা হয়।গতকালের বৈঠকেও একই প্রসঙ্গে সবার বক্তব্যের পর প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে অতীতকে স্মরণের আয়োজন ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। যাতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য দৃশ্যমান হতো। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করা দরকার।
বৈঠক শেষে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছি, যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে না পারেন, ভালো নির্বাচনও নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন, তাহলে পদত্যাগ করে চলে আসুন। সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগ্রহী সব পক্ষ মিলে আপনার নেতৃত্বে নির্বাচনী জোট করি।উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গতকাল দুই উপদেষ্টার আট ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার বিষয়ে মজিবুর রহমান মঞ্জু বৈঠকে বলেন, এর মানে উপদেষ্টাদের প্রতি জনগণের অনাস্থা তৈরি হচ্ছে। সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে।গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নুর প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, এনসিপির নিবন্ধন না থাকার পরও কোন যোগ্যতায় বিএনপি, জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে ডাকা হয়েছে? গোপালগঞ্জে কিছু ঘটবে; আঁচ করার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করেছে?
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জানালেন, তিনি উৎকণ্ঠিত। বললেন, সরকার সঠিক নির্বাচনের দিকে এগোবে; কিন্তু শুধু পুলিশের ওপর নির্ভর করলে হবে না। জনগণের ওপর নির্ভর করতে হবে।১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, এনসিপির নেতাদের প্রটোকল দেওয়া রাজনৈতিক মহলে ভিন্ন বার্তা যায়। প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, সব সংকটের অবসান ঘটবে যদি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। সচিবালয় যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তাতে বোঝা গেছে গোয়েন্দা বাহিনীর ব্যর্থতা ছিল।বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, সরকার দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি করেছে। অভ্যুত্থান পরিপন্থি কাজ করলে সরকারকে সমর্থন করব না। বৈঠকে বলেছি, সরকার মবকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। একটি দলকে যে প্রটোকল দেওয়া হচ্ছে, তা মন্ত্রীরাও পায়। ওই দলের জন্য গোপালগঞ্জে আট কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক বলেন, সরকারপ্রধানের উচিত ছিল লন্ডন সফরের পর নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করে ঘোষণা দেওয়া।এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার সবচেয়ে দুর্বল সরকারের পরিচয় দিয়েছে। সঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হচ্ছে।গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও মনোযোগ দিতে হবে। মাইলস্টোনের হতাহতদের তালিকা নিশ্চিত করতে হবে। বিমান বিধ্বস্তে গাফিলতি ছিল কিনা, তদন্ত করতে হবে। ফ্যাসিস্টদের বিচারের জন্য আরও বেশি ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজন। ৫ আগস্টের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে বলে আশা করি।গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ১১ মাসেও বিচার, পুলিশ, জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারেননি। তদন্ত ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার না করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু জামিন হচ্ছে না।খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকার ক্ষেত্রে বৈষম্য হচ্ছে। সবাই জানে, গোপালগঞ্জে ঝামেলা হবে। গোয়েন্দারা কেন জানতে পারল না?বৈঠকে অংশ নেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, জেএসডির তানিয়া রব প্রমুখ।