
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মজলুম জননেতা জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান আজ রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে নেতৃত্ব শূন্য করার লক্ষ্যে জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিথ্যা, সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে দলীয় লোকদের দ্বারা মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে ফাঁসির দণ্ড হাসিলের মাধ্যমে তৎকালীন আমীরে জামায়াত ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ ৫ জন শীর্ষনেতাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে। সাবেক আমীরে জামায়াত ও নায়েবে আমীরসহ ৬ জন শীর্ষনেতাকে বিচারের নামে প্রহসন করে কারাগারে আটক রাখে। আটক থাকাবস্থায় তারা মৃত্যুবরণ করেন। আওয়ামী সরকারের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের নির্মম শিকার হন তদানীন্তন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মজলুম জননেতা জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জামায়াতের দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে বাসায় ফেরার পথে সংগঠনের তদানীন্তন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। রিমান্ডে নিয়ে তাঁর ওপর চরম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে ন্যূনতম চিকিৎসা সেবাটুকুও দেয়া হয়নি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালে তিনি জামিনে মুক্তি লাভ করার পর নিজ বাসায় অবস্থানকালে পুলিশ তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। তাঁর বাড়ির চতুর্দিকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় সহকর্মীদেরকে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী সরকার জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে আবারো তাঁকে বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আওয়ামী সরকার দলীয় লোকদের দ্বারা তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো সাক্ষ্য প্রদান করে। একজন সাক্ষী আদালতে বলেছেন যে, তিনি ৭ কিলোমিটার দূর থেকে এবং অপর আরেক সাক্ষী বলেছেন যে, তিনি ৩ কিলোমিটার দূর থেকে ঘটনা দেখেছেন। সাক্ষীদের এই বক্তব্য অবাস্তব ও হাস্যকর। আরেকজন সাক্ষী নিজেকে জনাব আজহার সাহেবের ক্লাসমেট দাবি করে আদালতে আজহার সাহেবের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। আদালতে উপস্থাপিত ডকুমেন্ট অনুযায়ী আজহারুল ইসলাম ১৯৬৮ সালে কারমাইকেল কলেজ ত্যাগ করেন। আর কথিত সাক্ষী ১৯৭০ সালে কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। অতএব, আজহারুল ইসলামকে ঐ সাক্ষী তাঁর ক্লাসমেট হওয়ার যে দাবি করেছেন, তা সর্বৈব মিথ্যা। এ ধরনের মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। আপিল বিভাগের চারজন বিচারপতির মধ্যে তিনজন বিচারপতি ট্রাইবুনালের রায় বহাল রাখলেও একজন বিচারপতি এ রায়ের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম সেখানেও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী অবগত আছেন যে, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আদালতের মাধ্যমে বিচারের নামে প্রহসন করে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করাই ছিল আওয়ামী সরকারের মূল উদ্দেশ্য। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের হাতে হাজার হাজার মানুষ, গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর জামায়াত নেতৃবৃন্দ বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। দেশ স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্তিলাভ করে। রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় ফ্যাসিস্ট সরকারের গ্রেফতারকৃত অনেক নেতাকর্মী মুক্তিলাভ করেন। রাষ্ট্রপতির আদেশে অনেককে তৎক্ষণাৎ মুক্তি দেওয়া হয়। দেশবাসী আশা করেছিল যে, চরম জুলুম-নির্যাতনের শিকার জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশে মুক্তিলাভ করবেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের ৬ মাস ৮ দিন অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তিলাভ করেননি। জামায়াত স্বৈরশাসনামলে জুলুম এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আর স্বৈরশাসন মুক্ত বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী এখনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে বিচারিক কার্যক্রমসমূহ সারা বিশ্বে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যাত। স্বৈরাচারের আমলে গ্রেফতারকৃত জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামকে কারাগারে আটক রাখা তার প্রতি চরম জুলুম ও অন্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে তাঁকে এখনো আটক রাখায় জাতি বিস্মিত ও হতবাক। দেশবাসী স্বৈরাচারের কবল থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি চায়। এই পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।”