রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রায় পিছিয়ে তৈরি পোশাক খাতঢাকাসহ ৫ বিভাগে বৃষ্টির আভাস, অব্যাহত থাকবে তাপপ্রবাহপ্রতিদিন মা হারাচ্ছে ৩৭ ফিলিস্তিনি শিশুস্কুল-মাদ্রাসা খুলছে আজ, বন্ধ থাকছে ২৫ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানআজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস
No icon

জীবন যেন ফুটন্ত এক গোলাপ

লোকটা আমার দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে থাকত। চোখমুখে কেমন ছলছলে বুভুক্ষতার ছাপ। রোগা টাইপের শরীর। একদম শীর্ণকায় তার গড়ন। রাস্তার ধারে, কাঠের এক শক্ত পিঁড়িতে হাঁটু গেড়ে বসে থাকত সে।
ওই রাস্তার কিনার ধরে প্রায়ই আমি হাঁটতাম; আনমনে একেবারে অলক্ষ্যে। উত্তরার ঝকঝকে জলধোয়ার মতো রাস্তা। সার্বক্ষণিক সে রাস্তায় ব্যস্ত সব মানুষের আনাগোনা। তুমুল ব্যস্ততা নিয়ে হাঁটে সবাই। শুধু আমিই হাঁটি আনমনে, মন্থরগতিতে, ভাবুকতার আবেশ মিশিয়ে। কখনো ভোরের স্নিগ্ধতায়, বিকেলের ঝিরিঝিরি হাওয়ায় আবার কখনো সন্ধ্যা রাতের রুপোলি চাঁদের জোছনায়। কোনো এক বিকেলবেলা। উত্তাপ নেই, ডামাডোল নেই, একদম উপদ্রবশূন্য হালকা পরিবেশ। শেষ বিকেলের মরা রোদটুকুও মিইয়ে যাচ্ছে দিগন্তের আড়ালে। আকাশের আবছা নীলে উড়ছে নাম না জানা কিছু পাখির দল।
হাঁটছি আমি সে রাস্তার লেক ধরে। বাতাসের মৃদু দোলনে দুলছে আমার ধবধবে সাদা পাঞ্জাবির কোণা দুটো। ঠিক সে জায়গায়, যেখানে লোকটা বসে থাকত নিয়মিত, থমকে গেলাম সেখানে এসে। প্রকৃতির এমন অপরূপ সৌন্দর্যেও তার চেহারায় বিবশ হাহাকারের ছাপ। খুশি কিংবা মুগ্ধতার ছিটেফোঁটাও যে নেই! 

তার কোমর ঘেঁষে বসে আছে এক ফুটফুটে বালিকা। বিমল, টোল পড়া চেহারায় যেন ফুটন্ত এক গোলাপ। আড়চোখে অপলক চেয়ে আছে আমার দিকে। কিছুটা স্বার্থপরের মতো পাশ কাটিয়ে এগিয়ে এলাম আমি। কিছু দূর এগোতেই ভেতরে প্রকট অস্থিরতা অনুভূত হচ্ছিল। দূর থেকে লোকটার দিকে গভীরভাবে তাকালাম। লোকটার কপালে চকচক করছিল প্রত্যাশার ঝলক। তার ক্লান্ত চেহারা যেন বলছে, জীবন আমার বিসর্জন হলেও, আমার ফুটন্ত গোলাপটি ঝরে না পড়ুক। সে জন্য আমি জীবনযুদ্ধে সব ধরনের স্ট্রাগল করতে প্রস্তুত।
লেখাটি যখন লিখছি, তখন গভীর রাত। মিশমিশে গুমোট অন্ধকার। ২টার ওপর বেজে গেছে। কারেন্ট নেই। কী বীভৎস গরম। শরীর বেয়ে টুপটুপে পড়ছে ঘাম। বালিশের অড়ও ভিজে চুপচুপে। বারান্দায় গিয়ে হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচলাম। চোখ ভরতি রাজ্যের ঘুম চলে গেছে শূন্যে। জামিয়ার খোলা করিডোরে খাতা কলম নিয়ে বসে গেলাম। একটু পরপর ফোঁপা ফোঁপা চাপা কণ্ঠে কান্নার গোঙানি কানে বাজতে লাগল। এত রাইতে আবার কাঁদে কে! বারান্দার গ্রিল ধরে নিচে তাকিয়ে দেখি ঠিক সেরকম ফুটফুটে এক মেয়ে। পড়িমরি করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামি, কিন্তু তার আর খোঁজ পেলাম না। কোন গলি-ঘুপচি দিয়ে যে ঢুকল সে! খুব মনে পড়ছিল ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে থাকা সেই লোকটাকে এবং তার কোমর ঘেঁষে বসে থাকা ফুটফুটে সেই বালিকাটিকেও। সে দিনের পরে আর কোনো দিনও তাদের দেখা পাইনি। তবে কী আজকের মেয়েটিও হারিয়ে গেল! হায়রে জীবন, জীবন যে কত রঙের! আমার খুব ইচ্ছে করে ওদের জীবন জানতে, ওদের মাথায় আদুরে পরশ বোলাতে। হাতের নাগালে পেয়েও সে দিন স্বার্থপরতার আচরণ করেছিলাম। সে দিনটার কথা মনে হলে, খুব কষ্ট অনুভূত হয়!