
আন্তর্জাতিক নিন্দা উপেক্ষা করে গাজা সিটিতে স্থল অভিযানের বিস্তৃতি বাড়াচ্ছে ইসরায়েল। চলছে ব্যাপক বোমা হামলা। শত শত ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান শহরটির উপকণ্ঠে মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে লক্ষ্য বানিয়ে এক এক করে ধ্বংস করা হচ্ছে বহুতল ভবন। রয়েছে নজিরবিহীন অনাহার, ক্ষুধা, অপুষ্টি। সব মিলিয়ে নরকে পরিণত হওয়া গাজা সিটি ছাড়ছেন ফিলিস্তিনিরা। অবশিষ্ট আসবাব নিয়ে গতকাল বুধবার দলে দলে তাদের শহরটি ছেড়ে উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের দিকে যেতে দেখা যায়।এই স্থল অভিযানকে বহুল প্রত্যাশিত বলে বর্ণনা করেছে ইসরায়েল। সিএনএন জানায়, জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা অভিযান পরিচালনা না করার বিষয়ে সতর্ক করেছিল। তারা বলেছিল, সেখানে ইতোমধ্যে যে ভয়াবহ মানবিক সংকট চলছে, তা আরও খারাপ হতে পারে।গাজা উপত্যকার কিছু অংশকে ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষকবলিত ঘোষণা করা হয়েছে। উপত্যকার অর্ধেকের বেশি মানুষ গাজা সিটি ও এর আশপাশে বসবাস করেন। ইসরায়েল চায়, তারা যেন দক্ষিণ গাজায় চলে যান। আইডিএফ বলছে, এরই মধ্যে ৪০ শতাংশ বাসিন্দা শহর ছেড়েছেন।গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে গাজা সিটির পশ্চিমাঞ্চলে শাতি শরণার্থী শিবিরে বড় ধরনের বিস্ফোরণ দেখা গেছে। এতে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। তবে কয়েক ডজন মানুষ হতহত হন। আলজাজিরা জানায়, স্থল অভিযানের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার গাজা সিটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে ইসরায়েলের সেনা ও ট্যাঙ্ক। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, বিমান ও স্থলভাগ থেকে শহরে অন্তত ১৫০টি আঘাত হানা হয়েছে।
নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়াল গাজায় গতকাল বুধবার এক দিনে আরও ৫৯ জন নিহত ও ৩৮৬ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ত্রাণ নিতে গিয়ে গুলিতে নিহত হন সাতজন। অনাহার-অপুষ্টিতে মারা গেছেন চারজন। এতে অনাহারে মৃত্যু ৪৩২ জনে পৌঁছেছে। তাদের মধ্যে শিশু ১৪৬। আলজাজিরা জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৬৫ হাজার ৬২। আহত হয়েছেন এক লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জন। হতাহতের অধিকাংশই নারী ও শিশু।ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করতে যাচ্ছে ইইউ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বস্তুনিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তারা তেল আবিবের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের বিষয়টি বিবেচনা করছে। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, গাজায় গণহত্যার প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় কমিশন ইইউ ও ইসরায়েলের মধ্যে অ্যাসোসিয়েশন চুক্তির কিছু বাণিজ্য-সম্পর্কিত বিধান স্থগিতের বিষয়টি বিবেচনা করছে। তবে এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ইইউর ২৭ সদস্য দেশের সবকটির সমর্থন মেলেনি।
গতকাল বুধবার ঘোষিত প্রস্তাবগুলোয় চরমপন্থি ইসরায়েলের মন্ত্রী ও পশ্চিম তীরের সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের পাশাপাশি হামাসের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইইউর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কালাস সদস্য দেশগুলোকে কিছু ইসরায়েলি পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি এবং ১০ হামাস নেতা, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ও নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার দুই অতি-ডানপন্থি সদস্য জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে জার্মানিসহ কয়েকটি দেশ। আর এ পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল।