
মার্কিন পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক কমিটির শুনানিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি পদের জন্য মনোনীত পল কাপুর। তিনি বলেছেন, তাঁকে চূড়ান্ত করা হলে তিনি এ অঞ্চলে চীনের প্রভাববলয়ে সামঞ্জস্য ফিরিয়ে আনা এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজ করবেন।ওয়াশিংটনে মঙ্গলবার এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। কমিটি চূড়ান্ত করলে ট্রাম্প প্রশাসনের হয়ে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেখাশোনা করবেন পল কাপুর। বাংলাদেশ-ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো হলো পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও ভুটান। তা ছাড়া কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান নিয়ে গঠিত মধ্য এশিয়ায়ও দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।শুনানিতে পল কাপুর বলেন, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে (ইন্দো-প্যাসিফিক) স্থিতিশীলতার জন্য শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটান গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি বৃহত্তর। তিনি এই অঞ্চলের নিরাপত্তা জোরদার, চীনের প্রভাব মোকাবিলা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও বলেন।
পল কাপুর বলেন, ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন নিরাপত্তা স্বার্থকে এগিয়ে নিতে তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনে কাজ করার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনা, এ অঞ্চলে চীনের আধিপত্য, আফগানিস্তান সংকটসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন পল কাপুর। দায়িত্ব পেলে তিনি দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় কাজ করবেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বহু অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করতে আমি কাজ করব, যাতে চীনের আধিপত্য মোকাবিলা করা যায়। তাছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানো ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও লাভজনকভাবে গড়ে তোলার কথাও বলেন তিনি।পল কাপুর বলেন, এই অঞ্চলে প্রযুক্তি শেয়ার ও উদ্ভাবনকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় জ্বালানিপ্রবাহ নিশ্চিত করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক আরও গভীর করতে মনোযোগ দেবেন তিনি। দুই দেশের অংশীদারিত্বকে তিনি অপার সম্ভাবনার পথে এগিয়ে নিতে চান। পাকিস্তান প্রসঙ্গে পল কাপুর বলেন, এমন নিরাপত্তা সহযোগিতা অনুসরণ করা হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে সহায়ক হবে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সম্ভাবনা খুলে দেবে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়া একটি ভয়াবহ সংঘাত এড়িয়ে গেছে। এই সংঘাত থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
একজন ভারতীয় পিতা ও আমেরিকান মায়ের ঘরে নয়াদিল্লিতে জন্ম নেন পল কাপুর। তিনি বড় হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে একজন আমেরিকান শিশু হিসেবে। পল কাপুর বলেন, কখনও ভাবেননি যে নিজ জন্মভূমির অঞ্চলেই তিনি কর্মজীবনে দায়িত্ব পালন করবেন।শুনানিতে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এই পদে মনোনয়নের জন্য তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে কৃতজ্ঞ। এ সময় তিনি পরিবার ও বন্ধুদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।পল কাপুর স্নাতকোত্তর পর্যায়ে দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে পাঠে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। দ্রুতই একজন গবেষক ও সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এই অঞ্চল নিয়ে কাজ শুরু করেন। একজন গবেষক হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিবেশ এবং এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির ওপর বই ও প্রবন্ধ লেখেন। মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের এই অঞ্চল সম্পর্কে শিক্ষাদানে নিযুক্ত হন।যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগত সম্পর্কবিষয়ক প্রকল্প পরিচালনা করেছেন পল কাপুর। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পলিসি প্ল্যানিং স্টাফে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক দায়িত্বও পালন করেছেন।শুনানিতে বক্তব্যে পল কাপুর বলেন, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অপার সম্ভাবনা বহন করে। সঠিক নীতিমালার মাধ্যমে এই সম্পর্কগুলো বিকশিত হতে পারে। বর্তমান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।