বৃষ্টির পর বদলে গেল ঢাকার বাতাসএলপি গ্যাসের দাম কমবে না বাড়বে সিদ্ধান্ত আজদক্ষিণ সুদানে হাসপাতালে বিমান হামলা, নিহত ৭আরও পাঁচ হাজার নতুন রোহিঙ্গা কক্সবাজারেসপ্তাহজুড়ে থাকবে বজ্র-বৃষ্টি, কিছুটা বাড়বে তাপ
No icon

বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসাবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড

ভারতের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলির মধ্যে অন্যতম। সাধারণত বছরের পর বছর ধরে নিয়ম করে প্রস্তুতি এবং বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টার পর পাশ করা যায় এই পরীক্ষা। ভারতের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পরীক্ষাগুলির মধ্যে একটি হল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সির পরীক্ষা। নিষ্ঠা, মেধা ও অধ্যবসায়ের মিলিত ফল হল এই পরীক্ষার সাফল্য। খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীই বাধার পাহাড় টপকে সফলতার চূড়ায় আরোহণ করতে পারেন।দেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইউপিএসসি এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি (সিএ)র মতো পরীক্ষা। এই পরীক্ষাগুলিতে ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করা প্রশংসাযোগ্য। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রয়োজন কঠিন পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়। প্রথম সুযোগে বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীই এই পরীক্ষায় পাশ করতে ব্যর্থ হন। সাধারণত বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম এবং প্রস্তুতির ফলে যে পরীক্ষায় সাফল্য আসে তা প্রথম বারের প্রচেষ্টাতেই করায়ত্ত করেছেন ১৯ বছরের এক তরুণী। ভারতের অন্যতম কঠিন পরীক্ষায় বসেই অভাবনীয় সাফল্য পেলেন নন্দিনী আগরওয়াল। সাকিন মধ্যপ্রদেশের প্রায় অখ্যাত মোরেনা শহর। মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার পালক জুটেছে নন্দিনীর মুকুটে। সিএ পরীক্ষায় সারা ভারতের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন নন্দিনী। সর্বকনিষ্ঠ মহিলা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসাবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম উঠেছে তাঁর। এই কৃতিত্বের নেপথ্যে রয়েছে নিরলস নিষ্ঠা ও লক্ষ্যে পৌঁছোনোর অদম্য জেদ। তিনি যে বয়সে এই কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন, সেই বয়সে তাঁর বেশির ভাগ সহপাঠীই কলেজে ভর্তির লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০২১ সালে সিএ পরীক্ষা দিয়েছিলেন নন্দিনী। ৮০০-এর মধ্যে ৬১৪ নম্বর পেয়ে সিএ-র অন্তিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রেকর্ড গড়েন নন্দিনী। ১৯ বছর ৮ মাস ১৮ দিন বয়সে পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। তাঁর এই সাফল্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডও। নন্দিনী এই কৃতিত্বের কথা সমাজমাধ্যমে তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। পরিশ্রম আর উদ্যমের এমন যুগলবন্দিকে নিরাশ করেনি ভাগ্যও। কখনও দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দিতে হয়নি নন্দিনীকে। প্রতিটি ধাপে প্রথম বারেই এসেছে সাফল্য। ২০০১ সালের ১৮ অক্টোবর জন্ম নন্দিনীর। স্কুলজীবন থেকেই পড়াশোনায় ব্যতিক্রমী ছাপ ফেলেছিলেন। সমবয়সিদের থেকে সব সময় পড়াশোনায় অনেকটাই এগিয়ে থাকতেন এই তরুণী। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি দশম শ্রেণির পরীক্ষায় এবং ১৫ বছর বয়সে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করেন। ভিক্টর কনভেন্ট স্কুল থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর তিনি বাণিজ্য শাখায় ভর্তি হন। পাশাপাশি চলতে থাকে সিএ পরীক্ষার প্রস্তুতি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার পরীক্ষায় বসেন। প্রথম বারের প্রচেষ্টাতেই আসে সাফল্য। এক জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার জন্য ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ ইন্ডিয়া দ্বারা পরিচালিত কোর্স করতে হয়। কোর্সে তিনটি প্রধান স্তর রয়েছে— ফাউন্ডেশন, ইন্টারমিডিয়েট এবং ফাইনাল। এই তিনটি স্তরে পড়ার জন্য প্রার্থীদের যোগ্যতা আলাদা হয়। ছোটবেলা থেকে নন্দিনীর স্বপ্ন ছিল একটিই। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার স্বপ্ন বুনেছিলেন জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই। তাই পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন প্রথাগত পড়ার পাশাপাশি। এই নন্দিনীই ইন্টারমিডিয়েট স্তরে সারা ভারতের মধ্যে ৩১তম স্থান অধিকার করেন। সাফল্যের জন্য আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি মেধাবী এই ছাত্রীকে। ২০২১ সালের নভেম্বরে সিএ-র চূড়ান্ত পরীক্ষার রেজ়াল্ট বেরোতেই দেখা যায় চোখধাঁধানো ফল করেছেন নন্দিনী। অন্য পরীক্ষার্থীদের টপকে শীর্ষস্থানে জায়গা করে নেন নন্দিনী। ১৯ বছর বয়সে সিএ-তে সাফল্যের পর গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের কাছে আবেদন করেন তরুণী। বেশ কয়েক মাস অনিশ্চয়তা এবং অপেক্ষার পর তাঁর এই কঠোর অধ্যবসায়ের ফল হাতে আসে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি গিনেস থেকে তাঁর রেকর্ড নিশ্চিত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ইমেল পান। লিঙ্কড্‌ইনে একটি পোস্ট শেয়ার করে তিনি জানান, বিকেল নাগাদ ফোনে একটি বার্তা ঢোকে। সেখানে লেখা ছিল, “অভিনন্দন, এখন আপনি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের খেতাব জয় করেছেন।”পড়াশোনা ও নিজের লক্ষ্যপূরণে সফল হওয়া এই তরুণী সমাজমাধ্যমেও যথেষ্ট সক্রিয়। নন্দিনীর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ৭৪ হাজারেরও বেশি অনুরাগী রয়েছেন। সেখানে তিনি নিয়মিত তাঁর পেশাগত ও ব্যক্তিগত নানা বিষয় নিয়ে পোস্ট করে থাকেন। সিএ পরীক্ষার বিপুল চাপ সত্ত্বেও নাচকে ভালবাসার জায়গা দিয়ে রেখেছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামের পাতায় নিজের নাচের ভিডিয়ো মাঝেমধ্যেই পোস্ট করেন নন্দিনী। 

এ ছাড়া তাঁর একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। ২ লক্ষেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছেন সেখানে। যেখানে তিনি প্রায়শই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট পরীক্ষা এবং পড়াশোনার কৌশল সংক্রান্ত বিষয়বস্তু পোস্ট করে থাকেন। পড়াশোনার ক্ষেত্রে তাঁর বয়স কোনও বাধা না হয়ে দাঁড়ালেও কর্পোরেট জগতে নন্দিনীর যাত্রা একেবারে মসৃণ ছিল না। যখন তাঁর ১৬ বছর বয়স, তখন বেশ কয়েকটি সংস্থা স্রেফ বয়সের কারণে তাঁকে শিক্ষানবিশি পদে বহাল করতে অনীহা প্রকাশ করেছিল। বাধা সত্ত্বেও নিরলস এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বাধাগুলি একে একে অতিক্রম করতে থাকেন তিনি।