১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কাঁপছে নীলফামারী খালেদা জিয়াকে ওমরাহ’র আমন্ত্রণ জানিয়েছে সৌদি যুবরাজতিতাসে গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ছেসকালে কুয়াশা দুপুরে কড়া রোদ, ক্ষতির মুখে চাষিআদানি ইস্যুতে পার্লামেন্টে তুমুল হট্টগোল
No icon

আয়েশা রাশিদের প্রাণ বাঁচলো ভারতীয় নাগরিকের হৃদপিণ্ডে

পাকিস্তানের এক তরুণীকে হৃৎপিণ্ড দান করে অন্যন্য এক নজির সৃষ্টি করেছেন এক ভারতীয় নাগরিক। করাচির বাসিন্দা সানোবর রাশিদ বলেন, আমরা পাকিস্তানেও চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু এত বড় অঙ্কের টাকা জোগাড় করে উঠতে পারিনি। কিন্তু এখানকার চিকিৎসকরা আমাদের জন্য যা করেছেন তা অবিশ্বাস্য। এই মুহূর্তে আমার মনে যা চলছে তা প্রকাশ করার ভাষা নেই।

তার ১৯ বছরের মেয়ে আয়েশার হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন হয়েছে ভারতের চেন্নাইয়ের এমজিএম হাসপাতালে। দশ মাস আগে মেয়ের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের আশায় ভারতে এসেছিলেন তিনি। আয়েশা রাশিদের বয়স তখন মাত্র সাত বছর, যখন তিনি জানতে পেরেছিলেন যে তার হার্টের ২৫ শতাংশ অকেজো। এরপর ধীরে ধীরে তার হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছিল। ২০১৯ সালে চেন্নাইয়ের এক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে প্রথম দেখা করেন আয়েশা রাশিদ। এর কিছুদিনের মধ্যেই প্রথমবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন তিনি।

পাকিস্তানে অস্ত্রোপচার সম্ভব হয়নি

এই পরিস্থিতিতে ভারতে আয়েশার হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচার করে কৃত্রিম যন্ত্র বসানো হয়েছিল। কিন্তু করাচিতে ফিরে আসার দু’বছর পরে সংক্রমণের কারণে তার হার্টের ডান দিকটা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সে সময় চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন প্রতিস্থাপনই এখন একমাত্র উপায়।

পাকিস্তানে এই অস্ত্রোপচার সম্ভব ছিল না বলে জানিয়েছেন আয়েশা রাশিদ। তিনি বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছিলেন এই অস্ত্রোপচারের জন্য ভারতে বা কানাডায় যেতে হবে। এরপর আমরা চারিদিকে খোঁজখবর নিয়ে বুঝতে পারি, ভারতে গেলেই ভাল হবে।’ মেয়ের চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ের এক চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সানোবরের পরিবারের কাছে আয়েশার অস্ত্রোপচার এবং চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ছিল না। কিন্তু ভারতে তার চিকিৎসার জন্য অর্থ অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি।

সনোবর রাশিদ বলেন, ‘চিকিৎসক আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন তোমরা চলে আসো, আমরা বাকিটা সামলে নেব।’ এমজিএম হাসপাতালের হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের ডিরেক্টর ডা. বালাকৃষ্ণন ২০১৯ সাল থেকে আয়েশার চিকিৎসা করছেন। তিনি বলেন, ‘আয়েশা যখন প্রথমবার এখানে এসেছিল, সে সময় তার হার্ট অ্যাটাক হয়। সে সময় এক্সট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন নামে এক ধরনের এক্সট্রাকর্পোরিয়াল লাইফ সাপোর্ট বা একমো ব্যবহার করা হয়েছিল। আমরা একটি কৃত্রিম রক্ত পাম্পিং ডিভাইসও লাগিয়েছিলাম। এরপর স্বাস্থ্যের উন্নতি হওয়ায় ওকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানে কৃত্রিম হার্ট পাম্প পর্যবেক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেই এবং সে কারণেই একটা রক্তনালীতে লিকেজ হয়েছিল।’

চিকিৎসক বালাকৃষ্ণন জানিয়েছেন, এইবার যখন আয়েশা রাশিদ ভারতে চিকিৎসার আসেন সেই সময় তার শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। বেশ কয়েকদিন অচেতনও ছিলেন তিনি। ১৯ বছরের আয়েশা রাশিদ কয়েক বছর ধরেই ডা. বালাকৃষ্ণনের চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাকে যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন ওই বিশেষজ্ঞ। তারই মধ্যস্ততায় দিল্লির এক পরিবার তাদের ৬৯ বছরের এক মৃত সদস্যের হৃদপিণ্ড দান করতে রাজি হয়ে যায়।

এমজিএম হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক সুরেশ রাও বলেন, ‘ভারতে প্রতিস্থাপন নীতি অনুসারে, যে অঙ্গদানের ক্ষেত্রে প্রথম অগ্রাধিকার দেশের নাগরিকদের দেওয়া হয়। তাই আয়েশাকে ১০ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এই হার্ট আয়েশার পক্ষে তখনই পাওয়া সম্ভব ছিল যখন তার জন্য অন্য কোনো দাবিদার ছিল না।’ আয়েশার গুরুতর শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এই হার্ট না পেলে ওকে বাঁচানো সম্ভব হত না।’ ডা. সুরেশ রাও বলেন, ‘যখন জানতে পারি যে ওই ব্যক্তির পরিবার মরণোত্তর হার্ট দান করতে রাজি, তখন আমরা আয়েশাকে অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুত করি। পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে দিল্লি পৌঁছে যায় ওই হার্ট।’