চুল পড়া যা অ্যালোপেসিয়া বা টাক নামেও পরিচিত। চুল পড়ার তীব্রতা একটি ছোটে জায়গা থেকে পুরো শরীরে পরিবর্তিত হতে পারে। এর প্রদাহ বা দাগ সাধারণত থাকে না। কিছু মানুষের চুল পড়া মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়। চুল পড়ার কারণে অনেকের আবার টাক হওয়ার অবস্থা। যেকোনো সমস্যার সমাধান করার আগে খুঁজতে হবে এই সমস্যা হওয়ার কারণ।
চুল দ্রুত পড়ে যাওয়ার কারণ
- দুশ্চিন্তা করা।
- ভিটামিন ‘ই’ ও ‘ডি’-এর অভাব। বিশেষ করে চুলে সূর্যের আলো না লাগলে এবং ভিটামিন-‘ই’ জাতীয় খাবার না খেলে।
- প্রোটিন জাতীয় খাবারের অভাব।
- বংশগত কারণ।
- দীর্ঘমেয়াদি কিটো ডায়েট অথবা লো-কার্বস ডায়েট করলে।
- চুলে অতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করা বিশেষ করে রিবোন্ডিং, হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করা।
- সময়মতো না ঘুমানো এবং ঘুম কম হওয়া।
- চুলের যত্ন না নেয়া।
- ঠিকমতো চুল না আঁচড়ানো।
- হরমোনের দ্রুত পরিবর্তন।
- গর্ভাবস্থায় ও বাচ্চা প্রসবের পর।
- অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন ইত্যাদি।
যেভাবে খাবারের মাধ্যমে চুল পড়া কমবে এবং নতুন করে চুল গজাবে
প্রোটিন জাতীয় খাবার
প্রোটিন জাতীয় খাবারের মধ্যে দুই ধরনের প্রোটিন আছে যেমন- প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন। ১ম শ্রেণির প্রোটিন যেমন ডিম, দুধ, মাছ প্রতিদিন খাবেন এবং মাংস সপ্তাহে দুদিন খাবেন। ২য় শ্রেণির প্রোটিনের মধ্যে আছে ডাল, কোনো লিজিউম জাতীয় খাবার যা চুল গজাতে সাহায্য করবে। দুধ যেহেতু আদর্শ খাবার তাই প্রতিদিন দুধ পান করবেন।
ভিটামিন-ই ও বায়োটিন যুক্ত খাবার
যেকোনো মাছের তেলে ভিটামিন ‘ই’ থাকে। ভিটামিন-‘ই’ চুলের হরমোনাল বৃদ্ধি করে। ভেজিটেবল ওয়েল যেমন অলিভ ওয়েল, সরিষার তেল, সূর্যমুখীর তেল ইত্যাদিতে ভিটামিন-ই আছে। যেকোনো বাদামে ভিটামিন-ই আছে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ১৫ মি. গ্রাম বাদাম খেতে পারবেন। বায়োটিনযুক্ত খাবার চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বায়োটিন সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আছে কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট, টমেটো ও পালং শাকে। ভিটামিন ‘ই’ ও বায়োটিন যুক্ত খাবার চুলকে করে স্বাস্থ্য উজ্জ্বল, ঘন ও মসৃণ।
ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার
সূর্যের আলো চুলের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ করে চুলে যখন সরাসরি রোদ পড়ে চুলের স্কাল্প সহজেই তখন ভিটামিন-ডি পায় এবং এতে চুল পড়া বন্ধ হয়। তাই প্রতিদিন প্রায় ৫-৮ মিনিট সকালের রোদে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এছাড়াও টকদই, পনির, ছানা, দুধ, কাঠবাদাম, পালং শাক, সামুদ্রিক মাছ, শুঁটকি মাছ ইত্যাদিতে ভিটামিন-ডি আছে। ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে চুল পড়া বন্ধ হয়।
ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার
সামুদ্রিক মাছ, কাঠবাদাম, আখরোট, ডিম, অলিভ ওয়েল ইত্যাদিতে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ যুক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড আছে যা চুলের হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক রাখে, চুল পড়া রোধ করে এবং ফাংগাল ইনফেকশন থেকে চুলের স্কাল্পকে রক্ষা করে।
ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার
আমলকীতে ১০০% ভিটামিন-সি আছে। প্রতিদিন সকালে একটি করে আমলকী খাবেন এতে করে চুলের ফাংগাল ইনফেকশন হওয়া থেকে রোধ পাওয়া যাবে, চুল সুন্দর ও মসৃণ হবে। চুলের পুষ্টি অ্যাবসরবেশনের জন্য ভিটামিন ‘সি’র প্রয়োজন আছে যেমন লেবু, কাঁচামরিচ, কাঁচা আম, লিচু, পেয়ারা, বাতাবি লেবু, তেঁতুল, যেকোনো টক জাতীয় ফল ইত্যাদি।
ভিটামিন-এ যুক্ত খাবার
ভিটামিন-‘এ’ হলো চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন। ভিটামিন-‘এ’র মধ্যে মিষ্টিআলু, গাজর ইত্যাদি চুলের জন্য উপকারী। এতে থাকা বিটা ক্যারোটিন চুলকে সুন্দর ও স্বাস্থ্য উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। যেকোনো শাক এবং ভিটামিন-এ যুক্ত সবজি তেলের সাথে রান্না করলে সহজেই শোষিত হয় এবং চুল পড়া রোধ করে নতুন করে চুল গজাতে সাহায্য করে।
যেভাবে চুলের যত্ন করবেন
নিয়মিত সপ্তাহে ২-৩ দিন চুলে তেল লাগিয়ে স্কাল্পে ভালোভাবে ম্যাসাজ করবেন। যেমন- নারিকেল তেল, বাদামের তেল, সরিষার তেল, অলিভ ওয়েল, তিলের তেল, ভিটামিন ই, ক্যাস্টর ওয়েল। এই তেল একসাথে মিশিয়ে ম্যাসাজ করলে খুব দ্রুত চুল লম্বা হবে এবং চুল পড়া ১০ দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রতিদিন ৫-৬ বার চুল আঁচড়াবেন। যত বেশি স্কাল্পে চিরুনি পড়বে তত বেশি চুলের ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে। চুলের জন্য কোনো মেডিসিন খাবেন না। চেষ্টা করুন প্রাকৃতিক খাবার ও ঘরোয়া পদ্ধতিতে যত্নের মাধ্যমে চুল নতুন করে গজানোর।