আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন কি কথা শোনালেন, হঠাৎ করে তা কারো বোধগম্য হওয়ার কথা নয়। কি সাংঘাতিক কথা জানালেন তিনি। তার এই বক্তব্যের পর মানুষ রীতিমতো আঁতকে উঠেছে। গত এক মাসে সারা দেশে ১ হাজার ২২৭টি অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে বলে তিনি নিজেই বলেছেন। এ ধরনের হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং আগামীতে আরো বন্ধ করা হবে- যদি নিয়মণ্ডকানুন না মেনে চলা হয়। হাসপাতাল-ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার আগে যারা এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, তাদের কি হাসপাতাল-ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার বিধি-বিধান সম্পর্কে অবহিত করা হয় না যে, এসব শর্তপূরণ না করলে তাদের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল-ক্লিনিক এক সময় অবৈধ ঘোষণা করা হবে। কোনো হাসপাতাল ও ক্লিনিক চিকিৎসাসেবা দিতে পারবে, তাদের লাইসেন্স যিনি দিলেন তিনিও কি জানেন না যে, হাসপাতাল-ক্লিনিক পরিচালনা করতে হলে ন্যূনতম কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়? হাসপাতাল-ক্লিনিক মালিকরা যদি তাদের অজ্ঞতার বিষয়টি এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর দায় চাপান, তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এ ছাড়া যেসব হাসপাতাল-ক্লিনিককে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলো কীভাবে এতো দিন পরিচালিত হলো, সেটাও কি দেখার কেউ ছিল না। নাকি হাসপাতাল-ক্লিনিকের চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করার কাজটি তদারকি করার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান দেশে নেই।
যদি না থাকে, তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হোক, দেশের হাসপাতাল-ক্লিনিক কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় দেখভাল করে না। চিকিৎসা প্রার্থীরা নিজ দায়িত্বে হাসপাতাল-ক্লিনিক থেকে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করবে। জনগণকে এ ব্যাপারে একটা পরিষ্কার বার্তা দেয়া হোক। যেসব হাসপাতাল-ক্লিনিক অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, তারা এতো দিনে কত মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়েছে আর যাদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছে, তারা তা মনে করে এখন কি করছে, সেটা জানার সুযোগ নেই। তবে সাধারণ ধারণায় বলা যায়, তারা অবশ্যই হতচকিত হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন গত রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ব্রিফিংয়ে এই ‘শব্দ বিস্ফোরণ’ ঘটান। তিনি আরো বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো আমরা বন্ধ করতে চাই না, তবে এগুলো চালাতে হলে যতগুলো চিকিৎসক-নার্স প্রয়োজন- তা থাকতে হবে; যা যা যন্ত্রপাতি থাকার কথা, সেগুলো থাকা নিশ্চিত করতে হবে। সেটা করা না হলে, আমি কঠোর ব্যবস্থা নিতে জিরো টলারেন্স মেইনটেইন করব। কোনো অনুরোধ বা তদবিরেই এসব অবৈধ বা যন্ত্রপাতিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার সচল রাখা হবে না। আমরা ১ মাসে প্রায় ১ হাজার ২২৭টি অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করেছি, এখনো অভিযান চলমান আছে। এর সঙ্গে আরো বলে রাখি, বৈধ স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত লোকবল ও যন্ত্রপাতি না থাকলে, সেগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি দেশব্যাপী স্বাস্থ্য খাতের কিছু ইস্যু নিয়ে কথা হচ্ছে। ঘটনাগুলো যেকোনো মানুষের মনকেই নাড়া দেবে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে শক্ত হাতে উদ্যোগ নিতে বলেছেন। অতীতে কী হয়েছে, সেগুলো নিয়ে না ভেবে এখন থেকে কী করা হচ্ছে, সেদিকে বেশি মনোযোগ দিতে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতাল-ক্লিনিক সেবা শাখার সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা একটি বৈঠক করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এসব কথা শুনে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত আশ্বস্ত হয়েছে। তারা আশা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী যদি তার বর্তমান নীতি আদর্শ ও দৃঢ় অবস্থানের ওপর অবিচল থাকেন তাহলে আমাদের দেশে চিকিৎসাসেবা আরো উন্নত হবে। মানুষ কষ্টার্জিত পয়সা খরচ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত গিয়ে ভালো চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়টি ভাবতে পারবে না। আমাদের সমাজে চিকিৎসার কথা উঠলেই মানুষ পরামর্শ দেন ভারতে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসা সঠিক এবং ব্যয়সাধ্য। যে দেশে সামান্য খাতনা করতে গিয়ে ডাক্তাররা নাবালক নিষ্পাপ শিশুকে মেরে ফেলে, সেই দেশে চিকিৎসা কতটা নির্ভরযোগ্য হবে, তা সহজেই বোধগম্য।