গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি আজ শপথ নিচ্ছে নতুন নির্বাচন কমিশনরমজানে কঠিন সংকটের শঙ্কাপ্রহসনের তিন নির্বাচনে জড়িতদের তালিকা চূড়ান্তবিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন
No icon

প্রহসনের তিন নির্বাচনে জড়িতদের তালিকা চূড়ান্ত

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার এবং ২০১৩ সালে বাতিল করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। এরপর থেকে ক্ষমতাসীনদের করা নীলনকশায় এবং প্রয়োজনীয় সব রাষ্ট্রযন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদেরই অধীনে অনুষ্ঠিত হয় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। প্রতিটি নির্বাচনেই চলে ভয়াবহ কারচুপি। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এর তীব্র বিরোধিতা করলেও এতে কর্ণপাত করেনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নীলনকশার একপেশে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিজেরাই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এ নীলনকশা বাস্তবায়নের অন্যতম কুশীলব ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেজুড়বৃত্তি করা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। মাঠ প্রশাসনের এ কর্মকর্তাদের সঙ্গে চলে মাঠ পুলিশের যোগসাজশও। এসব অপকর্ম বাস্তবায়নে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তরফেও দেওয়া হয় নির্দেশনা। হাসিনার পতনের পর পাল্টে গেছে প্রেক্ষাপট। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে নানা অপকৌশলে ক্ষমতাসীনদের গদি টিকিয়ে রাখতে প্রশাসনের যারা ছিলেন কুশীলব, ইতোমধ্যেই তাদের একটি তালিকা চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ তালিকা আমাদের সময়ের হাতে এসেছে। অন্যদিকে পুলিশেও এমন কুশীলবদের আরেকটি তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে।ইতোমধ্যেই বিভাগীয় কমিশনারদের একটি তালিকা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের তালিকাও হয়ে গেছে। এখন চলছে এসব নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করা ইউএনওদের তালিকা চূড়ান্তকরণের কাজ। এ ছাড়া চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে ওই তিন নির্বাচনে পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়েও এবং সেই মোতাবেক তালিকাও হচ্ছে।

প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা পাতানো নির্বাচনে দলীয় কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে যেসব অফিসারের প্রত্যক্ষ দায় নেই কিংবা পরিস্থিতির শিকার, তারা ছাড় পাবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ২০৮ জন ডিসির নাম রয়েছে তালিকায়। ৬৪ জেলায় তিন নির্বাচনে ১৯২ জন ডিসি ছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। কিন্তু তফশিল ঘোষণার পর তিন নির্বাচনে ১৬ জেলা প্রশাসকের বদলির কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তার সংখ্যা বেড়ে হয় ২০৮। এতে তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ২৩ বিভাগীয় কমিশনারের নামও রয়েছে (২০১৪ সালে ময়মনসিংহ বিভাগে উন্নীত হয়নি।)বিতর্কিত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের অনেকে পরবর্তীকালে সচিব হয়েছেন। কেউবা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব পদেও পুরস্কৃত হন। ইতোমধ্যে অনেকে অবসরে গেছেন। কেউবা ওএসডি হয়েছেন। কেউবা মারা গেছেন। মাঠ প্রশাসনে বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, ইউএনওদের তৎপরতা ছিল। পুলিশের ডিআইজি, এসপি, ওসিও এসব কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ মদদ দিয়েছেন। অবশ্য প্রহসনের এসব নির্বাচনে তাদের সবাই যে এ তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন, এমনটি না-ও হতে পারে। তবে কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এ ধরনের দায়িত্ব পালনকালে নির্দেশ অমান্য করার সুযোগ ছিল কম। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায়নে ত্যাগী কর্মকর্তাদেরই প্রাধান্য দিত ক্ষমতাসীন দলটি।

২০১৪ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৬৭ জেলা প্রশাসকের ৪৩ জন অবসরে চলে গেছেন। ওই নির্বাচনের অবশিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা এবং পরের দুই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা এখনও কর্মরত। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা সবাইকে সরানো হয়েছে। আগের দুই নির্বাচনের কয়েকজন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে দুজনকে।ডামি নির্বাচন খ্যাত গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। আওয়ামী লীগ নেতারাই নৌকার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতার নাটক সাজিয়েছিলেন। ৭ জানুয়ারির ভোটকালে দায়িত্ব পালনকারী ৬৪ রিটার্নিং কর্মকর্তাকেই সরিয়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ নির্বাচন যে সুষ্ঠু হয়নি, এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন পর্যন্ত জাগেনি। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি কিংবা তাদের জোটগত কোনো দল বা প্রার্থী কোন আসনে নির্বাচন করবেন এবং দলের কোন প্রার্থী বিকল্প বা বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা ঠিক করে দিতেন খোদ শেখ হাসিনা।