
দেশে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৯ হাজার মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৪৫ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আক্রান্ত ও মৃত্যুর ৪৩ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে গত দেড় মাসে।এই সময়ে ৮৩ শতাংশ রোগী ভর্তি হয়েছে ঢাকা মহানগরসহ তিন বিভাগে।সবচেয়ে বেশি ৩০ শতাংশ রোগী ভর্তি হয়েছে ঢাকা মহানগরে। এরপর বরিশাল বিভাগে ২০ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে (মহানগরের বাইরে) ১৭ শতাংশ ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬.৬৪ শতাংশ।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০০ সালে দেশে নতুন করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয় রাজধানী ঢাকা থেকে। এরপর প্রায় প্রতিবছর রোগীর সংখ্যায় ঢাকা শীর্ষে ছিল।গত দুই বছর থেকে রোগীর সংখ্যা রাজধানীর বাইরে বেশি হলেও দুই মাস ধরে রাজধানীতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা কিছুদিন কম থাকবে। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরজুড়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে গিয়ে কমতে পরে।
এক দিনে হাসপাতালে আরো ২৪৫ ডেঙ্গু রোগী
গত এক দিনে আরো ২৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই সময়ে রোগটিতে কারো মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি। গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির এ তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৬ হাজার ৯২৭ জন ও মৃত্যু হয়েছে ১৪৫ জন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে।মৃত্যু ঢাকা মহানগরে। বরিশাল বিভাগে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ২০৯ জন ও মৃত্যু ১৯ জনের। ঢাকা মহানগরে আক্রান্ত ৯ হাজার ৩১০ জন ও মৃত্যু ৮৮ জনের।
জনস্বাস্থ্যের সমস্যা মনে করছে না সরকার :
ডেঙ্গু রোগের অঞ্চলভিত্তিক রোগতাত্ত্বিক পর্যালোচনা ছাড়া সংক্রামক এই রোগ নিয়ন্ত্রণ কঠিন বলে মনে করছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন।তিনি বলেন, অঞ্চলভিত্তিক ডেঙ্গুর রোগতাত্ত্বিক পর্যালোচনার জন্য সরকারের উদ্যোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে সরকারকে বারবার বলা হয়েছে। দৃশ্যত সরকার ডেঙ্গুকে জনস্বাস্থ্যের সমস্যা মনে করছে না। সরকারের দেখা উচিত, এডিস মশা বর্তমানে ব্যবহৃত কীটনাশকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে কি না। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর হার বেশি। যেসব দেশ মৃত্যু ও রোগ কমিয়ে এনেছে, তারা রোগতত্ত্বের জায়গায় গুরুত্ব দিয়েছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর। সর্বশেষ ২০২৪ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। মৃত্যু হয় ৫৭৫ জনের।