ইপিজেডে কারখানায় ভয়াবহ আগুনফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে সরকার বদ্ধপরিকর : ড. আসিফ নজরুলরোম সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টাচাকসুর ভোটগ্রহণ শুরু, ক্যাম্পাসে উৎসাহের আমেজচলছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মবিরতি, আজ ‘মার্চ টু সচিবালয়’
No icon

ইপিজেডে কারখানায় ভয়াবহ আগুন

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) এলাকায় একটি সাত তলা ভবন আগুনে পুড়ে গেছে। এই ভবনে থাকা অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড ও জিহং মেডিকেল কোম্পানির কারখানা ও গুদামের সব সামগ্রী পুড়ে ছাই হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে সাততলায় কারখানার গুদামে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন বাহিনীর ২৩টি ইউনিট রাত ১২টায়ও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।রাত ১১টার দিকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হলে আগুন দ্রুত নেভানোর সুযোগ তৈরি হয়। উত্তাপ কিছুটা কমায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাছাকাছি গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালান। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। রাত ১২টায় আগুন জ্বলছিল দাউ দাউ করে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ১০ ঘণ্টা ধরে টানা কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেকে খুবই ক্লান্ত। তার পরও আশপাশের ভবনগুলো রক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।আগুন লাগার পর চট্টগ্রাম শহর থেকে ফায়ার সার্ভিসের সব ইউনিট সেখানে যায়। ভবনের প্রথম থেকে চারতলা পর্যন্ত অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেডের কারখানা এবং পাঁচতলায় জিহং মেডিকেল কোম্পানির কারখানা। ছয় ও সাততলায় উভয় প্রতিষ্ঠানের গুদাম। সাততলায় আগুন লাগার পর ধীরে ধীরে তা নিচতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। রাত ৮টার দিকে পাশের তিনতলা ভবনে আরেকটি কারখানায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তাপ এত তীব্র ছিল যে, এক কিলোমিটার দূর থেকেও অনুভূত হচ্ছিল।

সকাল থেকে একটি গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের সংঘর্ষের জেরে সিইপিজেডের ভেতর যানজট ছিল। এতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছতে কিছুটা বিলম্ব হয়।থেমে থেমে কারখানাটির ভেতরে ছোট আকারে বিস্ফোরণ হচ্ছিল। আগুনের তাপের কারণে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কাছে যেতে পারছিলেন না। দূর থেকে এক পাশে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তারা।এ রিপোর্ট লেখার সময় শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৯টি ইউনিট এবং নৌ ও বিমানবাহিনীর চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছিল। সেনাবাহিনী ও বিজিবির দুই প্লাটুন সদস্যও নিয়োজিত ছিলেন কারখানার চারপাশে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। ভবন ঘিরে বিকেল থেকে বেশ কিছু উৎসুক মানুষ ভিড় করে। আগুন লাগার পর নির্ধারিত সময়ের আগেই কারখানাটির আশপাশের অনেকগুলো কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সুবাহান জানান, অ্যাডামস তোয়ালে ও ক্যাপ এবং জিহং মেডিকেল সার্জিকেল গাউন তৈরির কারখানা। সাততলায় দুটি কারখানার গুদাম থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। পরে এই আগুন ছয় ও পাঁচতলায় ছড়ায়। ধীরে ধীরে তা পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটিতে মোট ৭০০ শ্রমিক কাজ করেন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার অ্যালার্ম দিয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাই কেউ আহত কিংবা অগ্নিদগ্ধ হননি।

ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ভেতরে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নেভাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ভেতরে কোনো শ্রমিক আটকে নেই বলে কারখানার মালিকপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন। ভবনটির ছয় ও সাততলায় আটকে পড়া ২৫ জনকে উদ্ধার করা হয়। তারা ধোঁয়ায় আটকা পড়েছিলেন। আমরা তাদের নিরাপদে সরিয়ে এনেছি। কী কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে কিংবা কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।জিহং মেডিকেল কোম্পানিতে কর্মরত জোবেদা বেগম বলেন, আমি পাঁচতলায় কাজ করছিলাম। দুপুরে খাওয়ার পর আগুন আগুন বলে চিৎকার করে ওপর থেকে অনেককে নিচে নামতে দেখি। আমরাও সবাই দৌড়ে নিচে নেমে আসি। যে জায়গায় প্রথমে আগুন লেগেছে সেখানে নারী শ্রমিকরা অনুমতি ছাড়া যেতে পারেন না। জিহং মেডিকেল কোম্পানির সুপারভাইজার ফাহিমুল মাহমুদ ভূঁইয়া বলেন, চারতলায় ছিলাম। হঠাৎ জরুরি অ্যালার্ম শুনে নিচে নেমে আসি আমরা।শিল্প পুলিশের সুপার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, রাতে পাশের আরেকটি ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অ্যাডামস ক্যাপ কারখানাটি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন আমেরিকান নাগরিকের।