আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক আজ সর্বজনীন পেনশনের নিবন্ধন এক লাখ ছাড়াল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্কুল-মাদরাসা বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের নির্দেশমহাবিপদ এড়াতে এখনই সাজাতে হবে পরিকল্পনা ২৭ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধ থাকবে আজ
No icon

আনাড়ি হাতে ২০ টন ট্রাক, ফের সড়কে ঝরল ১৪ প্রাণ

ঝালকাঠি শহরের গাবখান সেতু থেকে নেমে টোল দেওয়ার জন্য সারিবদ্ধ কয়েকটি গাড়ি। টোল পরিশোধ হওয়ায় সবে এগোতে শুরু করেছে একটি প্রাইভেটকার। তার ঠিক পেছনে তিনটি ইজিবাইক (থ্রি-হুইলার) ও একটি পণ্যবাহী পিকআপ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দানবের মতো এসে একটি ট্রাক (খুলনা মেট্রো ট ১১ ০৯৫৭) পিষে দিল পাঁচটি গাড়ি।গতকাল বুধবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক সড়কে ঝালকাঠি শহরসংলগ্ন গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় মর্মন্তুদ এ ঘটনায় নারী-শিশুসহ ১৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে প্রাইভেটকারে একই পরিবারের ছয়জন রয়েছেন। আহত অন্তত ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি। গত মঙ্গলবার ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপের সংঘর্ষে ১৫ জন নিহতের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই ঝালকাঠিতে এ দুর্ঘটনা ঘটল। এদিকে গতকাল আলাদা ঘটনায় ছয় জেলায় দুই দম্পতিসহ আরও ১১ জন নিহত হয়েছেন।ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মহিতুল ইসলাম জানিয়েছেন, দুই অ্যাক্সেলের ট্রাকটির অনুমোদিত ধারণক্ষমতা ১৩ টন হলেও সিমেন্টবোঝাই ছিল প্রায় ২০ টন। ট্রাকচালকের ছিল হালকা যান চালানোর লাইসেন্স।সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাকটি ব্রেক ফেল করে নিয়ন্ত্রণ হারানোয় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পিরোজপুর থেকে ঝালকাঠি শহরগামী ট্রাকটি গাবখান সেতু পার হয়ে ঢাল দিয়ে নামার সময় ওভারলোডের কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। ফলে সেতুর পূর্ব ঢালে টোল প্লাজায় অপেক্ষমাণ যানবাহনগুলো পিষে দেয়। এতে যাত্রীরা ছিটকে সড়কে পড়েন। নিহতরা হলেন ঝালকাঠি সদরের গাবখান ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন, হেমায়েত হোসেন, শফিকুল ইসলাম মাঝি, নজরুল ইসলাম, আব্দুর রহিম, শেখেরহাট ইউনিয়নের সিফাত (৩), সিয়াম (৫), শহিদুল ইসলাম, রোজিনা বেগম, আতিকুর রহমান সাদি (১১), প্রাইভেটকারের চালক রাজাপুর উপজেলার মো. ইব্রাহিম, কাঁঠালিয়া উপজেলার তালগাছিয়া গ্রামের তাহমিনা, তাঁর মেয়ে নুরজাহান (৪) ও পিরোজপুরের ইমরান হোসেন।

প্রত্যক্ষদর্শী আনোয়ার হোসেন জানান, ঘটনা ছিল ভূমিকম্পের মতো। মুহূর্তে কয়েকটি যানবাহন দুমড়েমুচড়ে দিয়ে একটি ট্রাক সামনের দিকে চলে যায়। এরপর মানুষের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, তারা ঘটনাস্থল থেকে সাতজনের লাশ উদ্ধার করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে চার, বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তির পর তিন ও ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে একজন মারা যান। প্রাইভেটকারের মধ্যে একই পরিবারের ছয়জন ছিলেন।আহতদের মধ্যে মামুন খান, হাফিজুর রহমান, শাহিন, রিয়াজুল ইসলাম, ইব্রাহিম, আবদুল হাকিম, মিরাজ, আবদুর রহিম, মানিক, তহমিনা বেগম ও অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।দুর্ঘটনাকবলিত ইজিবাইকের যাত্রী আনোয়ার হোসেন জানান, বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তারা চারটি ইজিবাইকে স্বরূপকাঠি যাচ্ছিলেন। টোল দিয়ে দুটি সামনে গেলেও প্রাইভেটকারের কারণে পেছনে আটকা পড়ে অন্য দুটি। প্রাইভেটকারটি টোল দিয়ে এগোতেই একটি ট্রাক এসে সব গাড়ি পিষে দেয়।অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিতুল ইসলাম জানান, ট্রাকচালক আল আমিন ও সহকারীকে আটক করা হয়েছে। চালকের হালকা যানের লাইসেন্স থাকলেও ট্রাকের কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম, পুলিশ সুপার আফরোজুল হক টুটুলসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের জন্য পাঁচ লাখ, পঙ্গুত্ববরণ করলে তিন লাখ ও আহতদের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।