যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়াআজ দোকান বিপণিবিতান খোলা থাকবেভয়- ভোগান্তি, দেশজুড়ে সতর্কতাআওয়ামী লীগ ঠেকাতে মাঠে থাকবে সব দলশেখ হাসিনার রায় কবে, জানা যাবে আজ
No icon

শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির অপছায়া

রাজধানীর আকাশে এখনও আতঙ্কের ঘন মেঘ। রাস্তায় বিস্ফোরণের শব্দ, টহলরত বিজিবির গাড়ি, আর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও- সব মিলিয়ে শহরজুড়ে অজানা এক অস্থিরতা। সেই অস্থিরতার প্রথম থাবা এবার পড়েছে শিক্ষাঙ্গনে। নিরাপত্তার অজুহাতে ক্লাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, শুরু হচ্ছে অনলাইনে পাঠদান। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে- এটি কি কেবল নিরাপত্তাজনিত সিদ্ধান্ত, নাকি রাজনৈতিক প্রভাবের আরেক রূপ?

সাম্প্রতিক সময়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীতে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও নাশকতার ঘটনা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। ইস্ট ওয়েস্ট, ড্যাফোডিল, শান্ত-মারিয়াম, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি), ইস্টার্ন, সোনারগাঁও ও নর্থ সাউথসহ অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় বুধবার ও বৃহস্পতিবারের (১২-১৩ নভেম্বর) সব সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করে অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।এদিকে মোহাম্মদপুরের সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সময়সূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। নিউ ইস্কাটনের এজি চার্চ স্কুল নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কথা উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুল সানিডেইল গতকাল ও বৃহস্পতিবার অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এসএম মহিউদ্দিন বলেন, অনিবার্য কারণবশত সাময়িকভাবে সশরীরে ক্লাস স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনাতেই অনলাইনে পাঠদান চলছে।তবে শিক্ষার্থীদের একাংশ মনে করছে, নিরাপত্তার অজুহাতের আড়ালে শিক্ষাঙ্গনে ফের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।

ইউজিসির পরামর্শ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো : বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করেনি। আশা করেছিলাম, তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত নেবে না। যদি তা হয়ে থাকে, সেটা দুঃখজনক। ইউজিসি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও বিদ্রুপ : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ছিলেন গত জুলাইয়ের গণআন্দোলনের অগ্রভাগে। সেই আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থী নিহত, আহত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিলেন। এখন তারাই বলছেন- যারা সেই আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল, আজ তাদেরই নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের ডাকে ক্লাস বন্ধ রাখতে হচ্ছে- এটা এক ধরনের বিদ্রুপ।নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, যারা শেখ হাসিনার সরকারের পতনের লড়াইয়ে ছিল, তাদেরই এখন সেই আওয়ামী লীগের লকডাউনের ভয়ে ঘরে বসে ক্লাস করতে বলা হচ্ছে- এটা কতটা বৈপরীত্যপূর্ণ! আরেক শিক্ষার্থীর ভাষায়, প্রতিবারই রাজনীতির আগুনে পুড়ে যাচ্ছে শিক্ষা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এখন যেন ক্ষমতার পালাবদলের বলি।