আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক আজ সর্বজনীন পেনশনের নিবন্ধন এক লাখ ছাড়াল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্কুল-মাদরাসা বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের নির্দেশমহাবিপদ এড়াতে এখনই সাজাতে হবে পরিকল্পনা ২৭ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধ থাকবে আজ
No icon

আবারও সংকটের মুখে বিশ্ব অর্থনীতি

বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ টিকাদানে গতি আসায় মহামারীর ধকল কাটিয়ে বছরের শুরু থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল বিশ্ব অর্থনীতি। ধীরে হলেও বাড়ছিল আমদানি-রপ্তানি, চাঙ্গাভাব বিরাজ করছিল শেয়ারবাজারগুলোয়, মূল্যস্ফীতি ছিল নিয়ন্ত্রণে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছিল, চলতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রবৃদ্ধির হার ভালোই হবে। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি থেকে সরবরাহ সংকট শুরু হয়। প্রথমে ধারণা ছিল, এতে হয়তো বিলাসবহুল গাড়ির সংকট হবে বা বড়জোর বড়দিনের সময় ক্রিসমাস ট্রি সাঁজানোর উপকরণে টান পড়বে। কিন্তু হঠাৎ বাধ সাধল করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। অতিসংক্রামক এ ধরনের বিস্তারে এরই মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ওই মহাদেশের প্রায় সব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এর প্রভাবে দ্রুত ওঠানামা করছে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম এক ধাক্কায় ব্যারেলপ্রতি আরও ১০ ডলার কমেছে। ২০২০ সালের এপ্রিলের পর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের সবচেয়ে বড় দরপতন এটি।গত ৩০ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওমিক্রনের দৌরাত্ম্যে তা স্থগিত করা হয়। ফলে বাতিল হয় অসংখ্যা টিকিট ও ফ্লাইট। ইতোমধ্যে ইউরোপের দেশগুলোর প্রবেশ দ্বারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। প্রচ- এক ধাক্কা থেকে বেরিয়ে আসা পরিবহণ খাত আবারও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি বিশ্বের পর্যটন খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পরই হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দরপতন হয়েছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে আবারও টালমাটাল পরিস্থিতি নেমে আসতে পারে। এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর তিন মাসের মাথায়ই বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। প্রায় দেড় বছর পর অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় কিন্তু এখনো তা স্বভাবিক হয়নি। এরই মধ্যে আবার শুরু হয়েছে দেশে দেশে লকডাউন। এতে বাড়ছে পণ্যমূল্য। আবারও কর্ম হারানোর শঙ্কায় পড়েছে অসংখ্য মানুষ। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে না পারলে আগামী মার্চের মধ্যে ইউরোপে প্রাণ হারাতে পারে ৫ লাখ মানুষ।মহামারীর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুযোগের কারণে বিশ্বে এক বছরে গমের উৎপাদন কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এতে গত এক বছরে সামগ্রিকভাবে খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। কানাডা, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশগুলোয় গমের ফলন কমেছে। ফলে তারা রপ্তানিতে লাগাম টেনেছে। ফলে বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম হু হু করে বাড়ছে। খাদ্যশস্য হিসেবে গম থেকেই প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে নানা রকমের প্রধান প্রধান খাদ্য প্রস্তুত করা হয় বিশ্বজুড়ে। এ ছাড়া জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলছে, গত এক বছরে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৩১ শতাংশ। এ বছর খাদ্যপণ্যের দাম যতটা বেড়েছে গত এক দশকে আন্তর্জাতিক বাজারে দরবৃদ্ধির হিসেবে তা সর্বোচ্চ। এর কারণ হিসেবে করোনা মহামারীর পাশাপাশি সর্ববৃহৎ কৃষির দেশ কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।