তানজানিয়ায় ভারী বৃষ্টি-ভূমিধসে নিহত ১৫৫মাসের শুরুতে বৃষ্টির আভাস, গরম কমা নিয়ে সংশয়ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রআগামীকাল ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণশপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতি
No icon

নতুন আশার আলো শেয়ারবাজারে

ঢাকার মতিঝিলে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সাব্বির হোসেন। চাকরির পাশাপাশি শেয়ারবাজারে তার বিনিয়োগ ছিল। সেখান থেকে প্রতি মাসেই কিছু আয় হতো। এতে ভালোভাবেই চলে যেত তার সংসার। কিন্তু শেয়ারবাজারে দীর্ঘ দৈন্যদশায় অধিকাংশ টাকা খোয়া যায় তার। এদিকে, করোনার উপদ্রব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাকরিটাও চলে যায়। এমতাবস্থায় চোখে অন্ধকার দেখছিলেন তিনি। কিন্তু তার চোখে এখন নতুন আশার আলো। কারণ, করোনার মধ্যেও শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাজার আরও ভালো হবে বলে বিশ্নেষকরাও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। কারণ, বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। সাব্বির হোসেন জানান, ২০১০ সালে ২০ লাখ টাকার বিনিয়োগ দিয়ে শেয়ারবাজারে তার যাত্রা শুরু। প্রথমে বেশ লাভ হলেও বছরের শেষে বাজারে ধস নামে। কপাল পোড়ে তার। ধসের আগে তার শেয়ারের মূল্য ছিল প্রায় ৫০ লাখ টাকা। ধসে সব শেষ হয়ে যায় তার। স্ত্রীর গহনা বিক্রি ও ধার করে আরও ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু আসল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গত জুনে তার শেয়ারের মূল্য নেমে আসে ১৬ লাখে। কিন্তু তিনি ধৈর্য ধরে ছিলেন। গত জুনের শেষ দিক থেকে বাজার কমবেশি বাড়তে থাকে। তার শেয়ারের দামও বাড়তে থাকে। এখন তিনি আশায় বুক বাঁধছেন। শুধু সাব্বির হোসেন নন, এ রকম হাজারো বিনিয়োগকারী আবার শেয়ারবাজারমুখী হচ্ছেন। নতুন আশার আলো দেখছেন শেয়ারবাজারে। শুধু বিনিয়োগকারী নন, বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের হাজারো কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারানোর গভীর শঙ্কা নিয়ে দিন গুনছিলেন। অনেকের চাকরি চলেও গেছে। শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ানোয় স্বস্তি ফিরেছে তাদের মধ্যে। এখন তারাও ছাঁটাই চিন্তা থেকে সরে আসছেন।

ধসে পড়া বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন নেতৃত্বই এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে, যার পুরোধায় আছেন সংস্থাটির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী সমকালকে বলেন, বিএসইসির কাজ শেয়ারবাজারে পরিবেশ সৃষ্টি করা, যাতে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পান। তারা বিশ্বাস করতে চান, কেউ কারসাজি করে টাকা মেরে দিতে পারবে না। নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর গত দুই মাসে কিছু উদ্যোগের পাশাপাশি এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে বিনিয়োগকারীরা খুশি হয়েছেন। ফলে তারা নতুন করে বিনিয়োগ করেছেন। এতে শেয়ারদর বাড়ছে, বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। স্থবির শেয়ারবাজার নতুন করে জেগে উঠছে।গত ২১ জুন ঢাকার শেয়ারবাজারে মাত্র ৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল। যদিও শেয়ারের দরপতন ঠেকাতে গত ১৮ মার্চ আরোপ করা হয় ফ্লোর প্রাইস (প্রতিটি শেয়ারের বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর)।

কিন্তু সর্বনিম্ন দরেও শেয়ার কিনতে ভরসা পাচ্ছিলেন না কেউ। কারণ ফ্লোর প্রাইস যখন তুলে দেওয়া হবে, তখন পুনরায় দরপতন শুরু হতে পারে এমন আশঙ্কায়। কিন্তু দেড় মাস পর গত বৃহস্পতিবার সেই ডিএসইতে এক দিনে কেনাবেচা হয়েছে ৮৩৬ কোটি টাকার শেয়ার, যা গত ২১ জুনের তুলনায় প্রায় ২২ গুণ বেশি। ফ্লোর প্রাইসের বেশি দরে কেনাবেচা হয়েছে ৩১০ শেয়ার। ফ্লোর প্রাইসের কারণে এত দিন যারা শেয়ারে বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছিলেন না, তারাও ফিরছেন বিনিয়োগে। মে মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পাশাপাশি শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের বাজারমুখী করতে নানামুখী উদ্যোগ নেন। তিনি দায়িত্বশীলদের বোঝাতে সক্ষম হন, অর্থনীতিকে বেগবান করতে শেয়ারবাজারের বিকল্প নেই।