প্রধান বিচারপতি ড. রেফাত আহমেদের বিদায়ী সংবর্ধনা আজশরিফ ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্নএকুশে বইমেলা পিছিয়ে ভোটের পর, শুরু ২০ ফেব্রুয়ারিটানাপোড়েনে ঢাকা দিল্লি সম্পর্কযুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরও ৫ দেশ
No icon

টানাপোড়েনে ঢাকা দিল্লি সম্পর্ক

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের টানাপোড়েন চলছে। এ পরিস্থিতি মেনে নিয়েই বাংলাদেশ একটা গুড টু ওয়ার্কিং রিলেশন চেয়েছে। তবে দুদেশ সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে পারেনি, যে কারণে টানাপোড়েন রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।গতকাল সকালে দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করা হয়েছে। গত রোববার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে। এই পরিস্থিতি দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে নাকি সম্পর্ক নতুন একটি ধাপে যাচ্ছে এই প্রশ্ন করা হয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে।

উপদেষ্টা বলেন, এটা বলা কঠিন। আমাদের তো বাস্তবতা মেনে নেওয়া ভালো। আমরা চাইলে সেটা হবেই এমন তো কথা নেই। সম্পর্ক দুপক্ষ থেকেই এগোনোর চেষ্টা করতে হবে। আমার মনে হয় আমরা দুপক্ষ মিলে হয়তো অতটা এগোতে পারিনি, যে কারণে টানাপোড়েনটা রয়েই গেছে।তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে বসে আগে বক্তব্য দিতেন শুধু সামাজিক মাধ্যমে। পরে আমরা দেখলাম, প্রধান গণমাধ্যমে তাঁর (শেখ হাসিনা) বক্তব্য আসছে এবং সেই বক্তব্যের মধ্যে (বাংলাদেশ নিয়ে) প্রচুর উস্কানি রয়েছে। শেখ হাসিনা আদালত থেকে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি আমাদের পাশের দেশে বসে, এখানে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এটা আমরা আপত্তি করব বা তাদের (ভারতের) সহায়তায় চাইব যে তাকে ফেরত পাঠান।তৌহিদ হোসেন বলেন, সর্বশেষ যে বক্তব্য (ভারত) এসেছে তাতে আমাদের নসিহত করা হয়েছে। সেটার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে এটা নিয়ে আমরা প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই সরকার প্রথম দিন থেকে স্পষ্টভাবে বলে আসছে আমরা অত্যন্ত উঁচু মানের ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। যে পরিবেশ ১৫ বছর ছিল না। ভারত আমাদের এটা (নির্বাচন) নিয়ে উপদেশ দিচ্ছে, এটাকে আমি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য মনে করি। তারা (ভারত) জানে এর আগে ১৫ বছর যে সরকার ছিল, তাদের সঙ্গে (ভারতের) অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক ছিল। ওই সময় নির্বাচনগুলো যে প্রহসনমূলক হয়েছিল, সে সময় তারা (ভারত) একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। এখন  আমরা একটা ভালো নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি, এই মুহূর্তে আমাদের নসিহত করার তো প্রয়োজন নেই।নির্বাচন নিয়ে নসিহত তো পশ্চিমারাও দিচ্ছে, তাদের জন্যও কি একই বার্তা? উত্তরে তৌহিদ হোসেন বলেন, পশ্চিমাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ সব সময় আছে এবং তারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। কারণ আমরা চাই, পশ্চিমারা তাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাক। কিন্তু এভাবে একটা বিবৃতি (ভারতের বিবৃতি) দিয়ে যে আমাদের অবস্থানটাকে গ্রহণযোগ্য না, এই ধরনের কথাবার্তার পাশাপাশি বলা যে, এ রকম নির্বাচন হতে হবে, এই নসিহত আমরা গ্রহণ করতে পারি না। কারণ তাদের তো এই মনোভাব ১৫ বছর দেখা যায়নি। 

শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্য থামানোর পরবর্তী পদক্ষেপ জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ভারত যদি তাঁকে থামাতে না চায়, আমরা থামাতে পারব না। এটা আমাদের বুঝে নিতে হবে। আমরা চাইব, ভারত তাঁকে থামাক। এখানে যে একটা পরিবেশ সৃষ্টি যেটা হচ্ছে নির্বাচনের জন্য, সেখানে যেন শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে নষ্ট না হয়।বাংলাদেশের বিজয় দিবসে নরেন্দ্র মোদির বার্তা নিয়ে প্রশ্ন করলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারত সব সময় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশিদের ভূমিকাকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করে। কলকাতায় এ দিনটিকে ‘ইস্টার্ন কমান্ড দিবস’ হিসেবে পালন করে। তারা মনে করে, যুদ্ধ করে তাদের সেনাবাহিনী বিজয় অর্জন করেছে। এটা সত্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তারা বিজয় অর্জন করেছে। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান যারা অস্বীকার করেন, সামরিক ইতিহাস বা সামরিক বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা ছাড়া ভারত এই বিজয় অর্জন করতে পারত না।ভারতীয় ভিসা সেন্টার বন্ধ নিয়ে এক প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, আজকে যেহেতু একটি কর্মসূচি ছিল, কাজেই নিরাপত্তার কারণে ভিসা সেন্টার বন্ধ রাখতে পারে। আমরা নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়, সে চেষ্টা করেছি।