তপশিল ঘোষণামাত্র ২ উপদেষ্টার পদত্যাগ কার্যকরজাতীয় সংসদ ও গণভোটের তপশিল আজখালেদা জিয়াকে সিসিইউতে রেখে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসচিবালয়ে ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদশেখ হাসিনা নি কৃ ষ্ট শাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে: সাদিক কায়েম
No icon

তপশিল ঘোষণামাত্র ২ উপদেষ্টার পদত্যাগ কার্যকর

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে সরকারি সূত্র বলছে, এখনও পদত্যাগ কার্যকর হয়নি।আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যোগ দেবেন তারা। সন্ধ্যায় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে বিদায় নেবেন দায়িত্ব থেকে। তপশিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পদত্যাগ কার্যকর হবে।সরকারি এবং রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, পদত্যাগে রাজি ছিলেন না তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মাহফুজ আলম। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড পরিচিতি পাওয়া এই ছাত্রনেতা নির্বাচন না করে সরকারে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, নির্বাচনকালীন দায়িত্বে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নমুক্ত রাখতে পদত্যাগ করতে হবে।একাধিক সূত্র জানায়, মঙ্গলবার মধ্যরাতেও মাহফুজ আলম পদত্যাগ না করে আগামী সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর পর্যন্ত উপদেষ্টা পদে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। কিন্তু বুধবার সকালে পদত্যাগে সম্মত হন বিভিন্ন পক্ষের পরামর্শ এবং সরকার থেকে সরিয়ে দেওয়ার আশঙ্কায়।

পদত্যাগপত্র দেওয়া আসিফ মাহমুদ মঙ্গলবারই নিজ অবস্থান স্পষ্ট করেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচন করবেন। কোন দল থেকে প্রার্থী হবেন, তা ঠিক করেননি। মাহফুজ আলম প্রকাশ্যে আসেননি। তিনি গতকাল বিকেলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাঁর হেয়ার রোডের বাসায় ডেকে বিদায় নিয়েছেন।বুধবার রাতে এনসিপির সূত্র নিশ্চিত করেছে, নবগঠিত দলটিতেই আসছেন অভ্যুত্থানের শীর্ষস্থানীয় ছাত্রনেতা আসিফ মাহমুদ। তিনি ঢাকা-১০ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এ জন্য দল গোছানোর কাজ শুরু করেছেন। তবে মাহফুজ আলম নিশ্চিত করেননি, তিনি নির্বাচন করবেন কিনা। তাঁর জন্য লক্ষ্মীপুর-১ আসন খালি রেখেছে এনসিপি।গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের সূত্রের খবর, এনসিপিকে বিএনপির জোটে নিতে চেয়েছিলেন দুই উপদেষ্টা। এ শর্ত পূরণ হলে তারা এনসিপিতে আসবেন, অন্যথায় বিএনপিতে যোগ দেওয়ার যে সমীকরণ ছিল, তা আর নেই। আসন সমঝোতা না হওয়ায় বিএনপির জোটে এনসিপির যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তা মেনেই উপদেষ্টাদের এনসিপিতে আসতে হচ্ছে। লক্ষ্মীপুর-১ এবং ঢাকা-১০ আসনে ইতোমধ্যে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। দুই উপদেষ্টার মধ্যে মাহফুজ আলম জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির যে কোনো সমঝোতার বিরোধী।বিদায়ী দুই উপদেষ্টা বুধবার সন্ধ্যায় যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার হাতে পদত্যাগপত্র জমা দেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এই দুই ছাত্রনেতার পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের মঙ্গল কামনা করেন।

ড. ইউনূস বলেন, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে তোমরা যেভাবে জাতিকে ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তির পথে অবদান রেখেছ, তা জাতি মনে রাখবে। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতেও গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও বিকাশে তোমরা একইভাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে সরকারপ্রধানের এই বক্তব্য তুলে ধরেন।এর আগে গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সম্পদের হিসাব বিবরণী বুধবার সকালে দাখিল করেছি। কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করিয়েছি। নির্বাচন করব, এটা স্পষ্টভাবে বলা যায়। কিন্তু কোথা থেকে করব, কোন দল থেকে করব, সেটা পরবর্তী সিদ্ধান্ত।অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা মন্ত্রী পদমর্যাদার। প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করছেন। সংবিধানের ৫৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো মন্ত্রী যদি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দেন, তাহলে পদ শূন্য হবে।অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের জন্য একই বিধান প্রযোজ্য হলে প্রধান উপদেষ্টার কাছে পদত্যাগপত্র দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ আর পদে নেই। যদিও সরকারি সূত্র জানিয়েছে, বিদায়ী সংবর্ধনা দিতেই দুই উপদেষ্টাকে পরিষদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর তিন দিন পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হন নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ। এনসিপির দায়িত্ব নিতে নাহিদ গত ফেব্রুয়ারিতে সরকার থেকে পদত্যাগ করেন।মাহফুজ আলম শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ছিলেন। গত বছরের ১০ নভেম্বর তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। নাহিদ পদত্যাগ করার পর তাঁকে তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়।আসিফ মাহমুদ শুরুতে ছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এ এফ হাসান আরিফকে (প্রয়াত) সরিয়ে গত বছরের নভেম্বরে আসিফ মাহমুদকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।