
ভারতে রপ্তানি নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ মোকামে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। রপ্তানি শুরুর পরদিন গত বৃহস্পতিবার থেকে রপ্তানিকারকরা ইলিশ কিনছেন না। তাদের দাবি, চড়া দামে কিনে কম দামে রপ্তানি করায় লোকসান হচ্ছে। এ ছাড়া কলকাতার বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ থাকায় সেখানকার ব্যবসায়ীদের ইলিশ কিনতে আগ্রহ নেই।এদিকে রপ্তানিকারকরা ইলিশ না কেনায় গতকাল শুক্রবার পাইকারি মোকামে দাম কমেছে প্রতি মণে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। যদিও খুচরা বাজারে এর প্রভাব নেই। আগের মতোই ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।জানা গেছে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানি দর নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ১২ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার বা এক হাজার ৫২৫ টাকা। ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবরের মধ্যে রপ্তানি করতে হবে। ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমের শুরু থেকে সাগর-নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়ায় দাম সাধারণের নাগালের বাইরে। রপ্তানিযোগ্য (৬০০ গ্রামের বেশি) ইলিশের দাম পাইকারি ২ সহস্রাধিক টাকা। এক কেজি বা এর বেশি ওজন হলে তার দাম ২ হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা। রপ্তানির জন্য মাছ প্যাকেটিং ও বেনাপোল পর্যন্ত পরিবহন খরচ যুক্ত করলে কেজিতে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা বেড়ে যায়। ফলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত ১ হাজার ৫২৫ টাকা কেজি দরে রপ্তানি করলে বড় লোকসান হবে। এ কারণে রপ্তানির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ইলিশ রপ্তানিতে আগ্রহী নয়।
তবে অন্য একাধিক সূত্র অভিযোগ করেছে, ব্যবসায়ীরা মৌসুম শুরু আগেই চোরাই পথে পর্যাপ্ত ইলিশ ভারতে পাঠিয়েছেন। যে কারণে এদেশের চেয়ে এখন ভারতের বাজারে ইলিশ বেশি। যার প্রভাব পড়েছে রপ্তানির ক্ষেত্রে।বরিশাল পোর্ট রোড মোকামের চারটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানির অনুমতি পেয়েছে। এর মধ্যে মাহিমা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক বাবর আলী সমকালকে বলেন, বরিশাল থেকে যেসব আড়তদার ইলিশ কিনে রপ্তানিকারকদের কাছে পাঠান, দুদিন ধরে তারা পড়েছেন বিপাকে। রপ্তানি দরের চেয়ে বাজারে দাম অনেক বেশি। অন্যদিকে ভারতের বাজারে নিজস্ব ইলিশ থাকায় সেখানকার বাজারে দাম কম। ভারতের আমদানিকারকরাও ইলিশ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। যে কারণে অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। এ জন্য তাদের প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবার থেকে মোকামে ইলিশ কিনছেন না।পোর্ট রোডের আরও একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার রপ্তানি অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠান ইলিশ কেনেনি। দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মোকাম বরগুনার পাথরঘাটা থেকেও একই তথ্য জানা গেছে।
রপ্তানি অনুমতি পাওয়া পাবনার সেভেন স্টার ফিশিং প্রসেসিং করপোরেশনের প্রতিনিধি কামাল হোসেন জানান, ইলিশবোঝাই তাদের দুটি ট্রাক দুই দিন বেনাপোলে অপেক্ষার পর শুক্রবার যশোরে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান রপ্তানি বন্ধ করায় মোকাম থেকে ইলিশ কিনছে না।পাইকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন জানান, সেখানকার ব্যবসায়ীরা ইলিশ কিনে রপ্তানি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করতেন। এখন তারা সেই মাছ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে পাঠাচ্ছেন।এদিকে বুধবার রপ্তানি শুরুর প্রথম দিনই ইলিশের দাম বেড়ে যায়। তবে রপ্তানিকারকরা না কেনায় শুক্রবার দাম কিছুটা কমেছে বলে নিশ্চিত করেছেন মোকামের ব্যবসায়ীরা।বরিশালের পোর্ট রোড পাইকারি মোকামে শুক্রবার ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের দর ছিল প্রতি কেজি ১ হাজার ৮৮০ টাকা, যা রপ্তানি শুরুর প্রথম দিন বুধবার ছিল ২ হাজার টাকা। এক কেজি থেকে দেড় কেজি সাইজ শুক্রবার বিক্রি হয় ২ হাজার ১৫০ টাকা। এ আকারের ইলিশের দর বুধবারের তুলনায় কেজিতে ৫০ টাকা কমেছে।মৎস্য অধিদপ্তরে বরিশাল বিভাগীয় সিনিয়র সহকারী পরিচালক জহিরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, এ বছর ইলিশ আহরণের পরিমাণ দৃশ্যমান অনেক কম। যে কারণে মৌসুমের শুরু থেকেই দাম অস্বাভাবিক।তিনি জানান, মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে প্রতিবছর আশ্বিনের অমাবস্যা ও পূর্ণিমা মাঝে রেখে ২২ দিন ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সে হিসেবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞা শুরু হতে পারে। নিষেধাজ্ঞার শুরুর সঙ্গে শেষ হবে এ বছর ইলিশের ভরা মৌসুম।