সংঘাতের মধ্যেও মিয়ানমার থেকে আসছে গরু-মহিষআজ হজ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসরকারি ২৮ শিল্পপ্রতিষ্ঠান চলছে লোকসানেময়মনসিংহের ৩ উপজেলায় ভোট শুরু, নেই নারী ভোটার
No icon

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কতটা ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

স্মরণকালের ইতিহাসে ২০২৩ সাল ছিল সবচেয়ে উষ্ণ বছর। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী এমন উষ্ণ হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুভূত হবে। আজকের দিনে মানুষ ও প্রকৃতিকে ২০ বছর আগের তুলনায় চরম আবহাওয়া মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিশ্বে তাপপ্রবাহ, খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং অস্বাভাবিক আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় অতীতের তুলনায় বেড়েছে। গত কয়েক দশক ধরেই বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করছেন। অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এর ফলে মানব জাতি কী কঠিন সংকটের মুখোমুখি হবে, তারও পূর্বাভাস তারা দিচ্ছেন।অন্তত বিগত দুই দশক ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশেও সুস্পষ্ট। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ সবসময় দুর্যোগপ্রবণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বাধিক ভুক্তভোগীদের অন্যতম বাংলাদেশ। ভূ-প্রকৃতিগতভাবে বাংলাদেশ সমতল ও নিচু ভূমি এলাকা নিয়ে গঠিত। এ দেশের ৮০ শতাংশের বেশি জমি বন্যাপ্রবণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। বাংলাদেশের প্রায় ৪১ শতাংশ মানুষ জীবিকার জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ভারী বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ্বাস বা দীর্ঘস্থায়ী বন্যা এসব মানুষের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক কার্বন নির্গমন ৫০ শতাংশ কমানোর যে প্রতিশ্রুতি উন্নত বিশ্বের সরকারগুলো প্যারিস চুক্তিতে করেছিল; আজ এই ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে মনে হয়, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে তারা ব্যর্থ হবে। উপরন্তু গত এক দশকে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নির্গমনের হার বেড়েছে।

কার্বনসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলকে এতটাই উত্তপ্ত করছে যে, বিজ্ঞানীরা আগামী কয়েক দশকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। এই ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার ফলে গ্রীষ্মকালে ফসলের চাষাবাদ বা স্বাভাবিক কাজকর্ম করা মানুষের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠবে। জার্মান ওয়াচ ২০২১-এর গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সের হিসাব অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি সাতজনে একজন বাস্তুচ্যুত হয়ে ‘ক্লাইমেট রিফিউজি’তে পরিণত হতে পারে। গবেষণার ফল বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৯ দশমিক ৬ ইঞ্চি বা ৫০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশ প্রায় ১১ শতাংশ ভূমি হারাতে পারে এবং এ প্রক্রিয়ায় প্রায় ১ কোটি ৮০ লাঁখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। আরেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সায়েন্টিফিক আমেরিকান বলছে, বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫ ফুটেরও কম উচ্চতায় অবস্থান করছে। ২১০০ সালের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি ৫ থেকে ৬ ফুট বৃদ্ধি পায় তবে বাংলাদেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে ‘ক্লাইমেট রিফিউজি তে পরিণত হতে পারে। বাংলাদেশ সয়েল রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালে সমুদ্রের নোনাপানিতে প্লাবিত হতো বাংলাদেশের প্রায় ৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন হেক্টর কৃষিজমি। অথচ ২০০৯ সালে এসে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন হেক্টর। গত ৩৫ বছরে বাংলাদেশের কৃষিজমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ।