টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু মঙ্গলবারদেশে বেকার ২৫ লাখ ৯০ হাজার১৫ অঞ্চলে ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাসউপজেলা ভোট নির্বিঘ্ন করতে মাঠে পুলিশ র‍্যাব বিজিবিআগামী শুক্র ও শনি ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি
No icon

কিংবদন্তির বিদায়

তাঁর কীর্তি অনেক। আমৃত্যু সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কলামিস্ট হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এই মানুষটি সাহিত্যচর্চার শুরুর দিকে লিখেছেন অনেক কবিতা। লিখেছেন গল্প-উপন্যাসও। এই সব কীর্তি ছাপিয়ে সবার আগে তাঁর যে সৃষ্টির কথা মনে আসে, তা তিনি রচনা করেছিলেন কলেজের গণ্ডি পেরুবার আগে, ১৯৫২ সালের রক্তঝরা একুশে ফেব্রুয়ারির অভিঘাতে। সেই কবিতা থেকে সুরারোপিত গান জীবদ্দশাতেই তাঁকে কিংবদন্তিতে পরিণত করে দিয়েছিল। যতকাল জাতি হিসেবে বাঙালি টিকে থাকবে, ততকাল গীত হবে তাঁর লেখা- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।কালজয়ী এই গানের কবি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে লন্ডনের নর্থ উইক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। মাস দুয়েক আগে ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালেই মারা যান তাঁর মেয়ে বিনীতা চৌধুরী। তাঁর চার মেয়ে এবং এক ছেলের মধ্যে বিনীতা ছিলেন তৃতীয়। বাবার সঙ্গে তিনি লন্ডনের এজওয়ারের বাসায় থাকতেন, তার দেখাশোনা করতেন। বড় মেয়ে তনিমা চৌধুরীকে উদ্ৃব্দত করে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম বলেন,গত কিছুদিন ধরে গাফ্ফার চৌধুরী হাসপাতালে ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁর মেয়ে আমাকে জানিয়েছেন। আমরা গভীরভাবে শোকাহত।

একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারে সম্মানিত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের উলানিয়া জমিদার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা জহুরা খাতুন। শিক্ষাজীবনের শুরু হয় উলানিয়া জুনিয়র মাদ্রাসায়। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে চলে যান বরিশাল শহরে। ভর্তি হন আসমত আলী খান ইনস্টিটিউটে। বাবার মৃত্যুতে সে সময় আর্থিক অনটনের শিকার হয়ে উপার্জনের পথ খুঁজতে হয়। স্কুলজীবনেই কংগ্রেস হিতৈষী পত্রিকায় কাজ শুরু করেন তিনি। সাহিত্যচর্চার শুরু তখন থেকে এবং ১৯৪৯ সালে সেই সময়কার বিখ্যাত সওগাত পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর লেখা গল্প।১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। ওই বছরেই দৈনিক ইনসাফ পত্রিকায় যোগদানের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণভাবে সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। ঢাকা কলেজে পড়ার সময় থেকে ইতিহাসের বাঁকবদলের সাক্ষী হয়ে উঠতে শুরু করেন তিনি। যুক্ত হন ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনকারী ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। ঢাকা কলেজের ছাত্র আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী হাসপাতালে গিয়েছিলেন আহত সহযোদ্ধাদের দেখতে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে তিনি মাথার খুলি উড়ে যাওয়া একটি লাশ দেখতে পান, যেটি ছিল ভাষাসৈনিক রফিকের লাশ। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী পরবর্তীকালে বলেছিলেন, ওই লাশটি দেখে তাঁর মনে হয়, এ যেন তাঁর নিজের ভাইয়ের রক্তমাখা লাশ। তক্ষুণি কবিতার প্রথম দুটি লাইন তাঁর মনে আসে। পরে কয়েকদিন ধরে লেখা ওই কবিতাটি ভাষা আন্দোলনের প্রথম লিফলেটে একুশের গান শিরোনামে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৩ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে সংকলনে ও এটি প্রকাশিত হয়। কবিতাটিতে প্রথম সুরারোপ করেছিলেন আব্দুল লতিফ। পরে ১৯৫৪ সালে আলতাফ মাহমুদ গানটিতে সুর করেন। তাঁর সুরারোপিত গানটি ব্যবহূত হয় জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া চলচ্চিত্রে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এ গান অপরিমেয় অনুপ্রেরণার উৎস হয়েছে। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরিতে এই গান গাওয়া হয়। বিবিসির শ্রোতা জরিপে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গানের তালিকায় এটি তৃতীয় স্থান লাভ করেছে।