জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মিডিয়াকর্মীরা অধীর অপেক্ষায়, কী বলবেন তামিম ইকবাল? আগাম কোনো ধারণা করতে পারছেন না উপস্থিত কেউ। নানাজন নানা কথা বলছেন। কেউ বলছেন, ফিটনেস নিয়ে কথা বলবেন; কেউ বলছেন, দল নিয়ে কথা বলবেন। এভাবে মিডিয়াকর্মীরা যখন ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে, তখন কালো টুপি, কালো টিশার্ট, হাতে টিস্যু নিয়ে তামিম হাজির হন সংবাদ সম্মেলনে। টাইগার অধিনায়কের জ্বলজ্বলে চোখ, বিমর্ষ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, বিষয়টি খুবই সিরিয়াস। উপস্থিত সাংবাদিকরা নড়েচড়ে বসেন টাইগার অধিনায়ক কী বলেন। আধঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে তামিম যা বললেন, সেটা ছিল সবার ধারণার বাইরে। ২৪১ ওয়ানডেতে ৮৩১৩ রান ও ১৪ সেঞ্চুরি করা তামিম সবাইকে অবাক করে ঘোষণা দেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের, সাধারণত এমন অবস্থায় অনেকেই অনেক কিছু লিখে আনেন। আমি কিছুই লিখে আনিনি। আমি ওইভাবে কোনো প্রস্তুতিও নিয়ে আসিনি। আপনারা একটু মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালের ম্যাচটিই (৫ জুলাই) আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। আধঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সময় টিস্যু দিয়ে বাররার চোখ মুছছিলেন তামিম। শেষে কান্নায় ভেঙে পড়ে মাথা এলিয়ে দেন টেবিলে। তিন-চার মিনিট নিশ্চুপ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় মাথা তুলে সবাইকে শুধু বললেন,আশা করি আপনাদের সঙ্গে অন্য কোথাও দেখা হবে। তামিম এমন সময় অবসরের কথা ঘোষণা দিয়েছেন, যখন ওয়ানডে বিশ্বকাপ মাঠে গড়াতে বাকি তিন মাস। আফগানিস্তান সিরিজের খেলা বাকি দুই ম্যাচ। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম সিরিজের মাঝপথে কোনো অধিনায়ক হুট করে অবসরের ঘোষণা দিলেন। ১৯৮৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ জন অধিনায়ক টাইগারদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান এখনো খেলছেন। কিন্তু যারা খেলা ছেড়েছেন, তাদের মধ্যে খালেদ মাহমুদ সুজন ছাড়া আর কোনো অধিনায়ক মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারেননি। কেন? বিসিবির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনে কোনো অধিনায়কই মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারেননি। এ লজ্জা দেশের ক্রিকেটের!তামিম অবসর নিলেন কেন? নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিকেটপাড়ায়। বিসিবি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাইছে না। ক্রিকেটপাড়ায় জোর আলোচনা, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে কথায় বনিবনা না হওয়ায় তামিম আবেগতাড়িত হয়ে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।তামিম এর আগে টি-২০ ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন। এবার বিদায় বললেন ওয়ানডে ক্রিকেটকে। তবে টেস্ট খেলবেন কি না জানা নেই। যদিও তিনি জানিয়েছেন, সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই বিদায় বলেছেন তিনি। বিদায়বেলায় মিডিয়াকর্মীদের অনুরোধ করেছেন ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের সমর্থন জোগাতে,আমি অনেক কিছু বলতে চাই আসলে। কিন্তু আপনারা দেখছেন, আমি কোনো কথাই বলতে পারছি না। আশা করি আপনারা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করবেন। একটা অনুরোধ করতে চাই। আগামী দিনে যারা ক্রিকেট খেলতে আসবে, তাদের নিয়ে ভালো কথা লিখবেন, সমালোচনা করবেন। কিন্তু দয়া করে ক্রিকেটের মধ্যেই থাকবেন। এটা ক্রিকেটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বছর। সামনে বিশ্বকাপ। সুতরাং আশা করব আপনারা বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকবেন। দলকে সমর্থন জানিয়ে যাবেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।