আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে গবেষণা খাতকে। আগে এ খাতের প্রতি খুব বেশি নজর ছিল না সরকারের। ফলে অবহেলিত ছিল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট খাত। অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, নতুন অর্থবছরের বাজেটে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টকে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে উপস্থান করা হবে। মূলত চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গবেষণায় বিনিয়োগের সঙ্গে উদ্ভাবন এবং আবিষ্কারের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যে দেশগুলো যত বেশি গবেষণায় বিনিয়োগ করেছে, তারা তত বেশি আবিষ্কার ও উদ্ভাবনী শক্তি প্রয়োগে দ্রুত উন্নতি লাভ করে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পেছনে নিজস্ব উদ্ভাবন বা গবেষণার কোনো বিকল্প নেই, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে।সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় বারবার রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কথা গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।
বাজেট তৈরির সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিশ্চিত করতে হলে মানবসম্পদ উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। তাই সরকার রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টকে গুরুত্ব দিচ্ছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে।রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও নির্দেশনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে কে কি ধরনের কাজ করবে সেভাবেই কর্মপরিকল্পনা করতে হবে, যাতে তাদের গবেষণা এগিয়ে নিতে সহায়ক হয়। তাই বাজেট বক্তৃতায় গবেষণা উন্নয়ন বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় বলা হবে। যদিও আগের বাজেটে এ বিষয়ে তেমন কোনো কথা থাকত না।জানা গেছে, স্বাস্থ্য গবেষণা খাতে চলতি অর্থবছর ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী অর্থবছরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে। তবে এ বরাদ্দ আরও বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের খাত চিহ্নিত করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া নতুন কোন কোন খাতে বরাদ্দে দেওয়া যায় তা নিয়ে বাজেট বিভাগও কাজ করছে।জানা গেছে, বাংলাদেশ এখন নিম্ন মাধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্যে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সব মানদ-ের বিপরীতে দেশের ধারাবাহিক আর্থসামাজিক অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। এ ধারা অব্যাহত রাখতে, বাংলাদেশকে গুণগত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিল্পে (আইসিটি) এবং গবেষণায় গুরুত্ব দিয়ে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। টেকসই সমৃদ্ধি অর্জনে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাকে গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা বাড়াতে হবে।
একটি দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নির্ভর করে গবেষণার ওপর। গবেষণা খাত দেশের অর্থনীতিকে করে সমৃদ্ধ এবং সামাজিক সক্ষমতাকে পরিপূর্ণতা দান করে। শিক্ষার গঠনগত পরিবর্তন, প্রসার ও মান বৃদ্ধিকরণে গবেষণার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর শক্ত ভিত্তি স্থাপনের মূল হাতিয়ার হচ্ছে সুষ্ঠু গবেষণা খাত। গবেষণা খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে দেশীয় অর্থনৈতিক খাতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিম-লেও দেশের আলাদা স্থান তৈরি করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু গবেষণাপত্র নির্মাণ করা। পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে গতিশীল অর্থনৈতিক কাঠামো ব্যবস্থা নির্মাণ করতে যথাযথ গবেষণার বিকল্প নেই।অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মানবোন্নয়ন সূচকে বর্তমান বিশ্বে ইতিবাচকভাবে বহুল আলোচিত দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। এসব অর্জন ধরে রেখে সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ অর্জন করতে হলে গবেষণায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি করোনাপরবর্তী বিশ্ব, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও ডেলটা প্ল্যান ২১০০ কার্যকরের ক্ষেত্রে গবেষণা খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে।