আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসএপ্রিলে ৪৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টি অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টিবজ্রসহ শিলা বৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে আজ শুরু হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন
No icon

দক্ষিণ কোরিয়াকে বিধ্বস্ত করে কোয়ার্টারে ব্রাজিল

সাঁইত্রিশ মিনিটেই ৪-০; কী বলা যায় একে, নিষ্ঠুর রসিকতা, নাকি অতি সৌন্দর্যের তীব্রতা, যার দীপ্তে ছারখার কোরিয়া! গ্যালারির পাশে বসা কোরিয়ান যুবতীর ছলছল চোখের আকুতি বলছিল এতটা না হলেও পারত। অতটা অবশ্য হয়ওনি পরে, ৪-১ গোলেই থেমেছে ব্রাজিল। অন্য পাশে ব্রাজিলিয়ানদের রকপার্টির নাচ-গান দেখে মনে হচ্ছিল এমনই তো হওয়ার কথা। বিশ্বকাপের নকআউটে এসে কেইবা কাকে কবে করুণা করেছে। ব্রাজিলের জোগো বনিতার সৌন্দর্য দেখতেই তো সারাবিশ্ব তাকিয়ে আছে দোহার এই নাইন সেভেন ফোর স্টেডিয়ামে। সেলেকাওদের এমন আলোকবিভোর সান্নিধ্য পেতেই তো রাত জেগে খেলা দেখছে কত কোটি ভক্তকুল। চেনা এই দলটিকেই তারা আবারও দেখতে চায় ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচেও।

মাঠে আসা সমর্থকরা তো নেইমারের বল নিয়ে চামচের মতো ড্রিবলিংটাই দেখতে চেয়েছে, রিচার্লিসনের পায়ে জাদু দেখতে চেয়েছে, ভিনিসিয়ুসের মায়াবি প্লেসিং দেখতে চেয়েছে, পাকিতোর গোলও দেখতে চেয়েছে। গতকালের স্বপ্নিল রাতে তার সবটুকুই পেয়েছে ব্রাজিল। নেইমার ফিরতেই এ যেন উড়ন্ত ব্রাজিল। বাড়তি পাওনা বোধহয় পেয়েছে রিচার্লিসনের সঙ্গে কোচ তিতের নাচ। টেলিভিশনের ক্যামেরায় হয়তো তার সবটুকু ধরা পড়েনি, কিন্তু এদিন শেষ ষোলোর ম্যাচটি শেষ করতে যে পনেরো মিনিটও লাগেনি ব্রাজিলের। ম্যাচের সাত মিনিট যেতে না যেতেই ডান দিকের কোরিয়ান ডিফেন্স ভেঙে রাফিনহা বল গলিয়ে দেন ডি-বক্সে। হিজিবিজি ভিড় থেকে গোল করেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তখনও ঠিক গোল সেলিব্রেশনে নাচের তালটা আসেনি। মিনিট ছয় পর আসে সেই সুযোগ নিজেই করে নেন নেইমার। ডি-বক্সের মধ্যে রিচার্লিসনকে ফাউল করলে গোলপোস্টের পেছন হলুদ গ্যালারি থেকেই চিৎকার করে তাদের গণদাবি জানিয়ে দেন- নেইমার নেইমার বলে। বলটি হাতে নিয়ে তাতে চুমু খেয়ে আলত ছোঁয়ায় শুধু কোরিয়ান গোলরক্ষককে বোকা বানাতে যা সময় নেন নেইমার। ইনজুরি থেকে ফিরে চুলে রং করিয়ে শুধু নতুনভাবেই নয়, মাঠেও নতুন একটি রেকর্ড করে নেন তিনি। পেলে আর রোনালদোর পর নেইমারই তৃতীয় ব্রাজিলিয়ান যে কিনা তিনটি বিশ্বকাপেই গোলের মুখ দর্শন করেছেন। ম্যাচের পর সবাইকে নিয়ে পেলের সুস্থতা কামনা করে ব্যানার নিয়ে এসেছিলেন নেইমার।

দলে নেইমার আছে অথচ ভালোবাসা-আবেগ থাকবে না, তা কি হয়েছে কখনও। ওই গোলটির পরই প্রতিশ্রুতি দেওয়া নতুন চারের প্রদর্শনী, নেইমারের সঙ্গে ভিনিসিয়ুস, রাফিনহা আর পাকিতা। বেশ উপভোগ্য ছিল তার গ্যালারির কাছে। যে আনন্দ-আসর তিন গুণ করে দেন রিচার্লিসন। থিয়াগো সিলভার পাস হেড দিয়ে রিসিভ করে নিজেই গোলের মুখ খুলে নেন নাম্বার নাইন রিচার্লিসন। পুরো মাঠ তখন ব্রাজিলের দখলে, গ্যালারিতে সাম্বার ছন্দ তুঙ্গে তুলতে এরপর মঞ্চে নামেন পাকিতা। ভিনিসিয়ুুসের পাস থেকে কোনাকুনি যে শটে গোল করেন তা ডাগআউটের সামনে কোট-টাই পরা তিতেও যেন ছেলেমানুষ হয়ে যান। নিজেই সবাইকে ডেকে নিয়ে নাচতে শুরু করেন। প্রথমার্ধের হাতে থাকা আরও প্রায় ১০ মিনিটে অন্তত চারটি গোলের সুযোগ ছিল ব্রাজিলের। দ্বিতীয়ার্ধেও ৫৪ মিনিটে রাফিনহা, ৬২ মিনিটে নেইমার কোরিয়ার দরজা খোলা পেয়েও ঢুকতে পারেননি। বরং এই সুযোগে কোরিয়ার সিং হু পেইক দারুণ একটি গোল শোধ করে দেন। বলা যায়, মাঠে উপস্থিত হাজারো কোরিয়ানের ভাঙা হৃদয়ের কিছুটা সান্ত্বনার প্রলেপ লাগিয়ে দেন। আগের ম্যাচে জাপানের কান্নার পর বিধ্বস্ত কোরিয়া- পূর্বে আজ সূর্য উঠবে বুঝি হতাশার কান্না নিয়েই!