সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাবিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে গবেষণা খাতভূমধ্যসাগর থেকে ৩৫ বাংলাদেশি উদ্ধারযুক্তরাজ্যে যাচ্ছে সীতাকুণ্ডের লিচুগাজায় ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলের হামলায় নিহত ১২১ ফিলিস্তিনি
No icon

নতুন বিশ্ব সমীকরণে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের আশা

আজিম ইব্রাহিমের দ্য রোহিঙ্গাস ইনসাইড মিয়ানমারস হিডেন জেনোসাইড বইটা পড়ছিলাম। আজিম ইব্রাহিম একজন সুলেখক শুধু নন, তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কর্মসূচির একজন রিসার্চ ফেলো, যেটি হার্ভার্ডের কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট পরিচালনা করে। তিনি মিয়ানমারে গিয়ে, বাংলাদেশে গিয়ে এবং ভারতেও রোহিঙ্গাদের সমস্যাএই পুরো বিষয়টা নিয়ে একটা বিশ্লেষণধর্মী বই লিখেছেন।আজিম ইব্রাহিম এই বইয়ে দেখিয়েছেন, ১৯৪৮ সালে কী রকম রোহিঙ্গা ট্র্যাজেডি হয়েছিল, যখন মিয়ানমার, স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। গবেষণার ভিত্তিতে তিনি দেখিয়েছেন, ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা আছে যে রোহিঙ্গারা পৃথিবীর একটি সবচেয়ে নির্যাতিত সংখ্যালঘু হিসেবে পরিগণিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে রোহিঙ্গারা কখনো সেভাবে সমর্থন পায়নি, বরং তারা সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। রোহিঙ্গা নামের একটি ক্ষুদ্র মুসলিম গোষ্ঠী, যারা পশ্চিম মিয়ানমারে রাখাইনে বসবাস করে এসেছে।যেহেতু মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বৌদ্ধ, সেহেতু এই রোহিঙ্গারা বৌদ্ধ রাখাইন গোষ্ঠীর হাতে নানাভাবে নির্যাতিত হয়। মানবাধিকার সংগঠন মিয়ানমার সরকারের কাছে বারবার এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছে। ২০১২ সালে পরিস্থিতি যখন চরমে ওঠে, তখন প্রবল হিংসা শুরু হয় এবং বৌদ্ধ রাখাইন গোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসতে শুরু করে।

সুতরাং রোহিঙ্গারা হলো অন্যতম ন্যাশনাল রেস, যারা মিয়ানমারের জনসংখ্যার মধ্যেই বিকশিত হয়েছে, তারা সেখানে বড় হয়েছে, তাদের সন্তানরা অনেকে জীবিকা ধারণ করেছে। কিন্তু নাগরিকত্বের প্রশ্নে তাদের প্রতি অবহেলা হয়েছে। যে দেশে তারা জন্মেছে, সেই দেশ কিন্তু তাদের প্রতি অবহেলা জাগিয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা, চাকরি, আইনি সুরক্ষা কার্যত তারা কিছুই পায়নি। উপরন্তু নানাভাবে তারা সশস্ত্র আক্রমণের শিকার হয়েছে।এই বইটি পড়তে পড়তে আমার মনে হচ্ছিল, এই রোহিঙ্গা সমস্যা আজ বাংলাদেশের কাছে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতে ঢুকতে চাইলেও ভারত সরকারিভাবে একটা নীতি নিয়েছে যে তারা রোহিঙ্গাদের ভেতরে ঢুকতে দেবে না। দরকার হলে তাদের পুশব্যাক করা হবে। তাদের কোনোভাবেই ভারতে থাকতে দেবে না।

এমনিতেই বাংলাদেশ নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত। তার ওপর আবার রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে গিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে। রোহিঙ্গাদের সমস্যা কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে আরো অনেক বেশি জটিল করে তুলেছে। যে সময় বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, আর্থিক বিকাশের চেষ্টা করছে এবং গোটা দুনিয়ার নজর কেড়েছে, সেই সময় এ ধরনের সমস্যা। এই করোনাকালে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে।মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক, ভারত যেমন নষ্ট করতে চায় না, তেমনি বাংলাদেশকেও যে ভারতের অনেক বেশি প্রয়োজন, সে কথাও এই বই থেকেই জানা যাচ্ছে।কাজেই ভারত মনেপ্রাণে চায়, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যদি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার একটা সমাধান সম্ভব হয়!