
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ডিসেম্বরের মধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচন কমিশন (ইসি) অবশ্য বরাবরই বলে আসছিল যে, চলতি বছরের ডিসেম্বরকে টার্গেট করে তাদের কর্মপরিকল্পনা সাজানো হয়েছে এবং সেই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। তদুপরি সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রথম এমন নির্দেশনা পেয়ে অধিকতর তৎপর হয়ে উঠেছে ইসি।প্রাপ্ত তথ্যমতে, জুলাই-আগস্টের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চায় ইসি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আমরা জুলাই-আগস্টের ভেতরে পূর্ণ প্রস্তুত থাকার চিন্তা করছি। কারণ যে সংশোধনীগুলো আনা হচ্ছে সেগুলো ছাপাতে হবে। এরপর সেগুলো বিতরণ করতে হবে। এরও পরে মাঠপর্যায় থেকে সব পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ইসির লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে এই কমিশনার বলেন, আমরা বরাবরই বলে আসছি ডিসেম্বরই আমাদের লক্ষ্য। অক্টোবরে যদি আমরা তফসিল ঘোষণার চিন্তা করি, তাহলে জুলাই-আগস্টের ভেতরে আমাদের সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা এগোচ্ছি। এরপর রাজনীতিবিদসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডার যারা আছেন তাদেরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের মতবিনিময় হবে। তারপর তফসিল ঘোষণা করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে শুরুতে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা হয়। এরপর দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের অবস্থান আরও স্পষ্ট করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ঈদের আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আভাস দেন। এরপর লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে শর্তসাপেক্ষে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের বিষয়ে একমত হয় সরকার।আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, সেটা একমাত্র প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট এবং অন্তর্বর্তী সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু লন্ডনের বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে, তাই বিতর্কে না গিয়ে নির্বাচন আরও একটু এগিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকার প্রধানের। তাই ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট অনুষ্ঠানের একটা সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে। সেক্ষেত্রে অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করা হবে।এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ভোট যে দিনই হোক, দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট হলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণা হতে পারে। কিন্তু যেহেতু ফেব্রুয়ারি নিয়ে বিতর্ক তাই ভোট এগিয়ে জানুয়ারিতে করার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাতে কোনো পক্ষের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার দায়টাও নিতে হবে না সরকারের। আর জানুয়ারিতে ভোট করতে হলে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে; ডিসেম্বরে ভোট হলে তফসিল ঘোষণা করা হবে অক্টোবরে।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গত রবিবার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক শেষে তিনি বলেন, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন যখনই হোক না কেন, নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভার সিদ্ধান্ত পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরে সরকারের প্রেস উইং। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক প্রস্তুতিগুলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।প্রধান উপদেষ্টার এ নির্দেশনাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, নির্বাচন কমিশন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পারবে বলে আশা করি। আমি আশাবাদী মানুষ। নির্বাচন তো এ দেশের মানুষ চায়। কাজেই আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না।