
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রশাসন সাজাতে সতর্কে পা ফেলছে সরকার। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিকসহ বিভিন্ন তথ্য নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই চলছে। বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পদায়নের চূড়ান্ত তালিকা (ফিটলিস্ট) তৈরি করা হচ্ছে সময় নিয়ে। এ কারণে ডিসি পদায়নের চূড়ান্ত তালিকা তৈরির সাক্ষাৎকার দুই মাসেও শেষ হয়নি।এবার একটি বিতর্কহীন তালিকা তৈরি করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে ডিসি ও পুলিশ সুপার (এসপি) পদে প্রাধান্য পাবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা। ভোটের তপশিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ডিসি পদে রদবদল চাইলে এ তালিকা ধরেই করতে হবে। ডিসি-এসপির পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তালিকা তৈরিরও কাজ চলছে। সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর ডিসি নিয়োগের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকায় কর্মকর্তা ছিলেন ১০৬ জন। এর মধ্যে ৬১ জনকে ডিসি করার পর বাকি ৪৫ কর্মকর্তা অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকলেও তাদের নানা কারণে গ্রহণযোগ্য মনে করছে না মন্ত্রণালয়। সংসদ নির্বাচনের আগে এসব কর্মকর্তাকে ডিসি পদে পদায়ন সম্ভব নয় বলে গত ১১ জানুয়ারি নতুন তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। তবে এখনও শেষ হয়নি অধিকাংশ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার। অথচ ফিটলিস্ট প্রণয়ন কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল এক দিন অন্তর সাক্ষাৎকার নিয়ে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করার। আজ শনিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২৭তম ব্যাচের ৩০ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, এবার বিতর্কহীন তালিকা তৈরির কাজ চলছে। নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের ডিসি করা হবে। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের বদলের জন্য সর্বশেষ তালিকা তৈরিতে সময় কম পাওয়া গিয়েছিল। তাই ভালোভাবে তদন্ত প্রতিবেদন নেওয়া যায়নি। আগে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল, এর পর তদন্ত প্রতিবেদন এসেছে। এ জন্য সর্বশেষ তালিকার কিছু কর্মকর্তাকে ডিসি পদে না বসিয়ে নতুন তালিকা করা হচ্ছে।প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকবারই বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো অল্প সংস্কারের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে একমত হলে আগামী ডিসেম্বরের ভেতরে নির্বাচন হতে পারে। আর সংস্কার কার্যক্রম প্রসারিত হলে নির্বাচন হবে আরও ছয় মাস পরে। দৌড়ে ৫০৯ কর্মকর্তা নতুন ডিসি তালিকার জন্য প্রশাসন ও পূর্বতন ইকোনমিক ক্যাডারের বিবেচিত কর্মকর্তা রয়েছেন ৫০৯ জন। এর মধ্যে আছেন ২৫তম ব্যাচের ১৩৪ জন, ২৭তম ব্যাচের ২০৫ জন এবং ২৮তম ব্যাচের ১৫৮ জন। ২৫তম ব্যাচের ৪২ জন ও ২৭তম ব্যাচের ৩০ কর্মকর্তা আগেই ডিসি পদে পদায়ন পেয়েছেন।
প্রাধান্য পাবেন যারা এখন ডিসি পদে কর্মরত আছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তা। ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের শিগগির যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি হতে পারে। পরে তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বদলি করা হবে। ফলে সংসদ নির্বাচনের সময় ডিসি পদে থাকবেন ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা বেশি প্রাধান্য পাবেন। ২৫তম ব্যাচের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৪ সালে।তারা চাকরিতে যোগ দেন ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট। ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দেন ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর। ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দেন ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত।