ট্রাকচাপায় আহত সেই ফায়ার কর্মীর মৃত্যুজানুয়ারিতে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়াভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার৭৫ বছরে সবচেয়ে বড় সংকটে আওয়ামী লীগ১৮ ইউনিটের চেষ্টায় ৫ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি সচিবালয়ের আগুন
No icon

ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে মতদ্বৈধ

নতুন বছরের শুরুতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার তাগিদ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে বিএনপি। আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করাকে অর্থের অপচয় এবং সময়ক্ষেপণ করার কৌশল বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, পুরনো ধাঁচের সমস্যা এড়াতে নির্বাচনের আগেই কিছু সংস্কার কাজ শেষ করতে হবে। তবে সরকারপ্রধানের এমন সিদ্ধান্ত এবং নির্বাচন কমিশনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার বিষয়টিকে অনেকে নির্বাচনের জন্য সময়ক্ষেপণ হিসেবেও দেখছেন।রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে হালনাগাদ ভোটার তালিকা হয়ে থাকে। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক মাস পর কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন বিদায় নেয়। এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়ার পর প্রথম কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী মার্চের পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হবে। তবে তার আগে ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ হবে, তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।জানা গেছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হলে বিপুল সংখ্যক লোকবল প্রয়োজন। তা ছাড়া বিশাল একটা বাজেটেরও প্রয়োজন হবে। প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ভোটার যাচাই-বাছাই করতে গেলে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন বলেও জানা গেছে।

ইসির তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত ১৭ লাখ নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন রয়েছে। যেটা জানুয়ারি ২০২৫ সালে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে। এই তথ্যও ২০২২ সালে সংগ্রহ করা। এ জন্য নতুন করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রশ্ন উঠেছে।বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলি। তিনি  বলেন, এটা একটা মীমাংসিত বিষয়। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে ভোটার তালিকা হালনাগাদ হয়। এখন নতুন বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে আমি মনে করি না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা সময়সাপেক্ষ। তা ছাড়া এ জন্য অনেক জনবল লাগে এবং অনেক পয়সার অপচয় হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এত অর্থ খরচ করে এই কাজ করার কোনো দরকার নেই। খামোখা কেন পয়সা খরচ করবে।এদিকে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার বিপক্ষে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, আমরা সত্যিকার অর্থে একটি সঠিক ভোটার তালিকা চাই। তবে এর জন্য বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়ি বাড়ি যাওয়া অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ, অপ্রয়োজনীয় এবং তাতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোটার তালিকা আপগ্রেডের কাজটি করা হলে তা অবশ্যই নির্ভুল হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার পক্ষে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ আমাদের সময়কে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। দীর্ঘদিন এই কাজটি বন্ধ ছিল। কারণ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত থাকবে নাকি ইসির হাতে থাকবে- এ নিয়ে টানাহেঁচড়া চলছিল। পরে হাসিনা সরকার স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছিল এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকবে। পরবর্তীকালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টেছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা বসে নেই। তারা কাজ শুরু করেছেন। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার ঘোষণা করা তাদের কাজের অংশ। ভোটার তালিকা বাড়ি বাড়ি গিয়ে করা হোক আর যাই হোক, এটা করতে গিয়ে যেন বিপুল অর্থের শ্রাদ্ধ না হয়।