মগবাজারে আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যুপুনর্গঠন হচ্ছে নির্বাচন কমিশনবিকেলে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপিইসরায়েলের হামলায় গাজায় ক্ষুধার্ত ত্রাণপ্রার্থীসহ নিহত আরও ৭২জাতীয় ঐকমত্যের সংলাপে নতুন অগ্রগতি নেই
No icon

জাতীয় ঐকমত্যের সংলাপে নতুন অগ্রগতি নেই

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে নতুন কোনো অগ্রগতি হয়নি। সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে কমিটি গঠন এবং সংসদের উচ্চকক্ষের গঠন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলো তাদের আগের অবস্থানই তুলে ধরেছে।গতকাল রোববার সপ্তম দিনের সংলাপেও বিএনপি জানায়, নির্বাহী বিভাগ তথা সরকারের ক্ষমতা কমবে এমন কমিটি তারা মানবে না। নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কার করেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব। একই অবস্থান ১২ দলীয় জোট, এনডিএম, লেবার পার্টি, ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ পাঁচ দল ও জোটের।সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দল এবং জোটের বাকি ২৫ দলের মধ্যে ২৩টি আগের মতোই জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিটি হতে হবে।বিএনপি, এলডিপিসহ ছয়টি দল ও জোট সংসদের আসন অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিসসহ ২২টি দল জানিয়েছে, ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন করতে হবে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে না হলে উচ্চকক্ষেরই প্রয়োজন নেই। সিপিবি ও বাসদ জানায়, তারা উচ্চকক্ষ চায় না। অবস্থান স্পষ্ট করেনি গণফোরাম।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংলাপ শুরু হয়। মাঝে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে বিকেল সোয়া ৫টা পর্যন্ত চলে আলোচনা। পরে সংলাপে দু দিনের বিরতি দেওয়া হয়।শুরুতে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির ক্ষেত্রে খানিকটা পিছিয়ে আছি। জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে যেন সংবিধান সংশোধন না হয় তা নিশ্চিত করা দরকার। ব্যক্তির ক্ষমতা সীমিত করা প্রয়োজন। সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য প্রতিটি পদের বিপরীতে দু জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। এর বিরোধিতা এসেছে।

কমিটি নিয়ে মতবিরোধ

বিএনপি রাজি না হওয়ায় জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) পরিবর্তে গত বুধবার নিয়োগ কমিটির প্রস্তাব করে কমিশন। সাত সদস্যের এ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মানবাধিকার কমিশন এবং প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার কমিশনে নিয়োগ হবে। গতকাল সংলাপে কমিশন জানায়, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হবেন এমন ব্যক্তি, যিনি রাষ্ট্রের কোনো পদে নেই এবং আগের ১০ বছর কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।কমিটি গঠনের প্রস্তাব নাকচ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইসি, দুদক, মানবাধিকার কমিশন গঠনে আইন রয়েছে। প্রয়োজনে তা সংস্কার করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যেতে পারে। সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিটি হলে রাষ্ট্রের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তবে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর গোপন তালিকা থেকে নিয়োগ দিতেন রাষ্ট্রপতি। তা রোধে কমিটি প্রয়োজন।ডা. তাহের বলেন, নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক নেই। কেউ কেউ ভুল বুঝিয়ে বলতে চাইছেন, নিয়োগ কমিটি হলে প্রধানমন্ত্রীর হাত-পা বেঁধে দেওয়া হবে। আসলে এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর হাত-পা কিছুই জড়িত নয়।

সাংবিধানিক নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাবকে মৌলিক সংস্কার আখ্যা দিয়ে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বিএনপির কারণে মৌলিক সংস্কার আটকে আছে। যদি সরকার বা প্রধানমন্ত্রীই ইসি, দুদকসহ সব প্রতিষ্ঠানে ইচ্ছা অনুযায়ী নিয়োগ দেন, তবে তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হবেন।বিএনপিকে ইঙ্গিত করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, এক-দুটি দলের দাদাগিরিতে সংস্কার আটকে থাকতে পারে না। উচ্চকক্ষ গঠনে বিএনপির অবস্থানকে সমর্থন করলেও নিয়োগ কমিটি চান বলে জানিয়েছেন এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী।