দেশসেরা ব্র্যান্ডসমূহকে পুরস্কৃত করল বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মারা গেছেন ট্রাকচাপায় আহত সেই ফায়ার কর্মীর মৃত্যুজানুয়ারিতে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়াভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার
No icon

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এ দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের মর্মন্তুদ এক দিন। বিজয়ের ঊষালগ্নে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণার দিন।এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ফিরে এসেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। এর তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করায় নতুন চেতনায় উদ্ভাসিত হয়েছে জাতি। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা করছে দেশের জনগণ।শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন তারা।যেভাবে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের শেষলগ্নে বাঙালি যখন চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা মেতে ওঠে দেশের বুদ্ধিজীবীদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞে। বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে বাঙালি মেধার সে নৃশংস নিধনযজ্ঞ গোটা বিশ্বকে হতবিহ্বল করে তোলে।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দু দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে ঘাতকচক্র কেবল ঢাকা শহরেই প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার কৃতী মানুষকে চোখ বেঁধে অপহরণ করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। সান্ধ্য আইনের মধ্যে সেই রাতে তালিকা ধরে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী ও পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হত্যা করে ফেলে রাখা হয় নিস্তব্ধ, ভূতুড়ে অন্ধকারে।পরদিন সকালে ঢাকার মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটখোলায় বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় বুদ্ধিজীবীদের নিথর দেহ। কারও শরীর বুলেটবিদ্ধ, কারও বা অমানুষিক নির্যাতনে ক্ষত-বিক্ষত। হাত পেছনে বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নাড়ি-ভুঁড়িও বের করে ফেলা হয়েছিল অনেকের। আর ঘুম থেকে জেগে ওঠা স্বাধীনতা ছুঁইছুঁই উল্লসিত মানুষ স্বজন হারানোর সেই কালরাত্রির কথা জানতে পেরে শিউরে উঠেছিল।

বাঙালি জাতির দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে এসব বুদ্ধিজীবী স্বীয় মেধা-মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছেন। দেখিয়েছেন মুক্তির পথ। গোটা জাতিকেও উদ্দীপ্ত করেছেন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। আর সেটিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের জন্য।১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞের শিকারের দিন হিসেবে স্মরণ করা হলেও মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই ইতিহাসের এ ঘৃণ্যতম অপকর্মের সূচনা হয়। সপ্তাহজুড়ে এই তালিকায় একে একে উঠে আসে অসংখ্য বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম। পরে কৃতী এসব বুদ্ধিজীবীর তালিকাই তুলে দেওয়া হয়েছিল কুখ্যাত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে। নেপথ্যে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলী। মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি করে, বেয়নেটে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা শুরু হয়। এই অপকর্মের চূড়ান্ত নীলনকশারই বাস্তবায়ন ঘটে ১৪ ডিসেম্বর।

আজকের কর্মসূচি শোকের আবহে আজ পালিত হবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। শোকের প্রতীক কালো পতাকাও উড়বে। দেশব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন গৃহীত কর্মসূচিতে আরও রয়েছে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করবে।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই আজমের নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এদিন বুদ্ধিজীবী দিবসের পবিত্রতা রক্ষায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় মাইক বা লাউড স্পিকার ব্যবহার না করার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ নিবন্ধ। সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা।