দীর্ঘ সাত বছর ধরে চলা আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে যাচ্ছেন সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিতে মাঠে নামা শিক্ষার্থীরা। শিগগিরই বাড়ানো হতে পারে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা। সংশ্লিষ্ট কমিটির পক্ষ থেকে এমন আভাস পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত ঘোষণা এলে এটি হবে ৩৩ বছর পর চাকরির প্রবেশের বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত। এর আগে, ১৯৯১ সালে চাকরিতে প্রবেশের প্রবেশের বয়স বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়েছিল।২০১৮ সাল থেকে শিক্ষার্থীরা চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। আওয়ামী সরকারের শাসনামলে এ বিষয়ে সংসদে এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে কথা উঠলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ফের একই দাবি নিয়ে মাঠে নামেন শিক্ষার্থীরা।গত সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। এদিন তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকও করেন। সেদিনই চাকরিপ্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতে সাবেক সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী আহ্বায়ক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানকে সদস্যসচিব করা হয়। এ ছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে আরও রয়েছেন সাবেক যুগ্মসচিব কওছার জহুরা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইকবাল ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তাদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
গতকাল বুধবার আন্দোলনকারীদের প্রতিনিনিধির সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন সরকার গঠিত এ কমিটির সদস্যরা। ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর যৌক্তিকতা আছে। তিনি বলেন, বয়স বৃদ্ধির দাবিতে যারা আন্দোলন করছেন তাদের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। সরকারের বর্তমান নীতিমালা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ও সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে সবকিছু চিন্তা করে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। বয়স বৃদ্ধি করার যৌক্তিকতা আছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।কী যৌক্তিকতা আছে- এমন প্রশ্নে আহ্বায়ক বলেন, কোভিড, সেশনজটে অনেকের সমস্যা হয়েছে। এখনকার চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো উচিত। তবে কতটুকু বাড়ানো দরকার, এটা আমি আজ বলতে পারছি না। আমরা সবকিছু পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব- কতটুকু বাড়ানো যায়। তিনি বলেন, এই কমিটির প্রধানত একটাই ফোকাস- চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে অনেকদিন ধরে একটি আন্দোলন চলছে। এটার ভিত্তিতে সরকার আমাদের পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছে। আমাদের আগামী এক সপ্তাহের মধ্য প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কমিটির কাজ হচ্ছে সরকারের কাছে সুপারিশ করা দাখিল করা। আমরা বয়স ৩০ থেকে আরও দুই তিন বছর বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরতে পারি। তবে কমিটির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে সরকার থেকে।
তবে এদিন সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে চাকরিতে ৩৫ বছর বয়সের প্রত্যাশী আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক রাসেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে প্রত্যেকে আমাদের কথা শুনেছেন। যৌক্তিকতার নিরিখে আমাদের আলোচনাগুলোকে তারা অ্যাপ্রিসিয়েট করেছেন। তারা আমাদের কথাগুলো বিশ্লেষণ করে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য একটা চমৎকার প্রতিবেদন দেবেন।চাকরির বয়স ৩৫ না করে কম করা হলে আপনারা মানবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে রাসেল মাহমুদ বলেন, তারা আমাদের বলেছেন, তোমাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে এসেছো, আমরা তার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান দেব। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি, আপনারা এমন সিদ্ধান্ত নিন যেন আন্দোলন মাঠে থেকে না যায়। আমরা আশাবাদী একটি যৌক্তিক সমাধান হবে। সেটা ন্যূনতম ৩৫ বছর এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে উন্মুক্ত করার কথা হয়েছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটার ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।বর্তমানে চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর। আর অবসরে যাওয়ার বয়স ৫৯ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর।