কক্সবাজারে ইয়াবাকারবারিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা আলোচিত দুটি মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ বুধবার। এই মামলায় মোট আসামি রয়েছেন ১০১ জন। ২০১৯ সালে টেকনাফে আত্মসমর্পণ করেছিলেন তারা। রায় ঘোষণার আগে জামিনে থাকা অনেক আসামি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। আবার অনেকেই রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত থাকতে আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। রায় নিজেদের পক্ষে নিতে বিচারককে ঘুষ দিতে আসামিদের পক্ষ থেকে তহবিল গঠন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, সব কিছু ঠিক থাকলে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রায় পড়া শুরু করবেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। ওই দিন কারাগারে থাকা আসামিদের আদালতে হাজির করা হবে। এ নিয়ে আদালতসহ পুরো এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
টেকনাফ থানার ওসি আবদুল হালিম জানিয়েছেন, মামলার সর্বশেষ নির্ধারিত তারিখে অনুপস্থিত থাকায় আদালত ৮৪ জনের জামিন বাতিল ঘোষণা করেন। এর মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখনো পলাতক রয়েছেন ৮৩ জন। তাদের মধ্যে জনপ্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রয়েছেন।জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করে ১০২ ইয়াবা কারবারি। সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, ৩০টি দেশে তৈরি বন্দুক ও ৭০ রাউন্ড গুলি জমা দেন তারা। ওইদিনই তাদের বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়। টেকনাফ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) শরীফ ইবনে আলমের দায়ের করা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান পরিদর্শক এবিএমএস দোহা। সেদিনই সব আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট মোহাম্মদ রাসেল নামে এক আসামি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান।
২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়। একই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল সব আসামির উপস্থিতিতে শুনানি শেষে মামলার চার্জগঠন করেন। বিচার শেষে ১৫ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২৩ নভেম্বর দিন ধার্য্য করেন।মামলায় অভিযুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল বলেন, এরা সকলেই চিহ্নিত ইয়াবা গডফাদার এবং আত্মস্বীকৃত। এদের যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদ- না দিলে ইয়াবাকারবারিরা উৎসাহ পাবে। জেলার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, তাদের সবার প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান জরুরি, যার ফলে অন্যান্যরা এ ঘৃণীত অপরাধে আর কখনো জড়িত হবে না। আদালত নিশ্চয় সব বিবেচনা করে রায় প্রদান করবেন।এ মামলায় ৮৩ জন পলাতক আসামির অনেকেই রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত থাকতে আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত কতজন আদালতে উপস্থিত থাকবেন, এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে রায় পর্যন্ত।