দীর্ঘদিনের বেতন-গ্রেড বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে আবারও মাঠে নামছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে আজ শনিবার থেকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ । এ কর্মসূচির নেতৃত্বে থাকছেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (কাসেম-শাহীন) সভাপতি প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাসেম, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ, দশম গ্রেড বাস্তবায়ন আন্দোলনের সমন্বয়ক মু. মাহবুবুর রহমান এবং মোহাম্মদ আনোয়ার উল্যা।তৃতীয় ধাপে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক মো. মহিব উল্লাহ এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বলেন, আমরা বহু বছর ধরে বেতন কাঠামোর ন্যায্যতা দাবি করে আসছি। উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েও আমরা এখনও ১১তম গ্রেডে সীমাবদ্ধ। এখন আমাদের লক্ষ্য দশম গ্রেড বাস্তবায়ন। শিক্ষকদের তিন দফা দাবি : এক. সহকারী শিক্ষকদের জন্য দশম গ্রেড প্রদান, দুই. ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদানের জটিলতা নিরসন; এবং তিন. শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ফের রাজপথে : গত ১৭ অক্টোবর থেকে শিক্ষকদের একাংশ আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেছিলেন। পরে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত হলেও দাবি বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় এবার তারা ফের লাগাতার অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন।শিক্ষকরা জানান, কয়েক দফা আলোচনার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আপাতত ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিল এবং সে অনুযায়ী গত ৭ আগস্ট প্রস্তাবনা পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়নের পরিবর্তে নবগঠিত পে-কমিশনে পাঠায়।দুই মাসেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও কোনো সিদ্ধান্ত না এলে শিক্ষক প্রতিনিধিরা পে-কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে কমিশন জানায়, বেতন-গ্রেড পরিবর্তন তাদের এখতিয়ারভুক্ত নয়, এটি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিষয়। ফলে শিক্ষকরা আবারও পূর্বের দাবিতে ফিরে গিয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
শিক্ষকদের দাবি, দেশের বিভিন্ন খাতে সমপদস্থ কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই দশম গ্রেডে কাজ করছেন। যেমন- পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, নার্স, কৃষি কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রমুখ। অথচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও ১১তম গ্রেডে সীমাবদ্ধ।একজন আন্দোলনকারী শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা জাতি গঠনের কারিগর হয়েও ন্যায্য মর্যাদা পাই না। এই অন্যায় মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সকাল ১০টা থেকে অবস্থান শুরু : ঘোষণা অনুযায়ী, সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু হবে। সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তাদের মতে, প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবিগুলো শুধু আর্থিক নয়, এটি শিক্ষা ব্যবস্থার মর্যাদা ও প্রণোদনার সঙ্গে যুক্ত।আন্দোলনের অন্যতম নেতা আবুল কাসেম বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকরা দেশের মূল শিক্ষা কাঠামোর ভিত্তি গড়ে দেন। তাদের ন্যায্য দাবি পূরণ মানে শিক্ষা ব্যবস্থার মর্যাদা বৃদ্ধি।উল্লেখ্য, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা গত কয়েক বছর ধাপে ধাপে বেতন-গ্রেড উন্নয়নের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের মতে, শিক্ষা খাতে যারা প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ করেন, তারা সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, অথচ বেতন ও মর্যাদায় তারা সবচেয়ে পিছিয়ে।আন্দোলনকারীরা আশাবাদী, সরকার দ্রুত এই দাবিগুলো বিবেচনা করবে এবং প্রাথমিক শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নসহ তিন দফা দাবি পূরণ করে একটি স্থায়ী সমাধান দেবে।