
অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হলেও আরও কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীনে থাকবে সাত কলেজ। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও পরীক্ষা নিয়মিত চালিয়ে নিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকার এই সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের কাজও এগিয়ে নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আগ পর্যন্ত সময়ে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যেন বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি। এতে বলা হয়, অনেকটা হঠাৎ করেই ঢাবি কর্তৃপক্ষ সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। সামনে কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষা আসন্ন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের চলমান ক্লাস এবং পরীক্ষাগুলোও চালিয়ে নেওয়া জরুরি। এমতাবস্থায়, সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আগ পর্যন্ত সব ক্লাস, পরীক্ষা ঢাবির অধীনেই সম্পন্ন করা যেতে পারে।কমিটির প্রস্তাব অনুসারে, সাত কলেজের পরবর্তী ভর্তি পরীক্ষাও (২০২৪-২০২৫ সেশন) নেবে ঢাবি। তবে সাত কলেজের পুরো একাডেমিক বিষয়টি সুপারভিশন, মনিটরিংসহ দেখভাল করবেন ইউজিসির একজন সদস্য। কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের মধ্য থেকে যে কোনো একজন সমন্বয় ও তদারকি করবেন। ইউজিসির সদস্যদের মধ্যে অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খান এবং সাত কলেজের মধ্যে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসকে এই দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটকে আরও কিছুদিন সাত কলেজের একাডেমিক বিষয়গুলো পরিচালনা করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হবে। কমিটি সাত কলেজের অধ্যক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ তাঁর সব সহকর্মী, কলেজগুলোর বিভাগীয় প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেই এই অন্তর্বর্তী প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান এবং ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি স্বতন্ত্র কাঠামো দাঁড় করানো, তার রূপরেখা তৈরি, নাম চূড়ান্ত, অধ্যাদেশ প্রস্তুত করাসহ নানা কাজে একটু সময় দরকার। এই অন্তর্বর্তী সময়ে সাত কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই পরিচালনা করতে আমরা সরকারের কাছে সুপারিশ করেছি। ইউজিসির একজন সদস্য পুরো বিষয়টি দেখভাল করবেন।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় উইং থেকে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রস্তাব পাওয়ার পর ছোটখাটো দু একটি বিষয়ে জানতে চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানতে চাইলে কমিটির সদস্য ও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খান সোমবার বলেন, বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রস্তাব এখনও চূড়ান্ত নয়। কিছু জিজ্ঞাসাসহ আমাদের কাছে নথি ফেরত এসেছে। এতে আরও কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন হবে। এখনই এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতো কিছু নেই।বিশেষজ্ঞ কমিটির অপর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কমিটির প্রতিবেদনে এইচএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত শিক্ষার মানোন্নয়নকে সর্বোপরি প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা ও কাঠামো নিয়ে কাজ করছি। যেমন, একটা কাঠামোতে আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে দেশের সব কলেজ আছে, আবার অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এতদিন কিছু কলেজ ছিল। আমরা এসব কাঠামো নিয়ে কাজ করছি। আমরা সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এর বাইরেও নতুন মডেল বিবেচনা করছি।
তিনি বলেন, জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণের প্রস্তাবও আমরা করেছি। জুলাই বিদ্রোহে শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বিভিন্ন গ্রাফিতিতে তারা এটাকে জুলাই ৩৬ হিসেবে উল্লেখ করেছিল। বিদ্রোহের প্রতিফলন, তাদের আত্মত্যাগ স্মরণ এবং তাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, আমরা বিশ্বাস করি তাদের প্রচেষ্টাকে সম্মান জানাতে এই নামটি উপযুক্ত হবে।গত ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর বড় সাত কলেজের সঙ্গে ৮ বছরের সম্পর্কের ইতি টানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগের দিন রাতভর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের ঘোষণা দেয় ঢাবি। সেদিন অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।