দুই বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাসপাঁচ ব্যাংকের শেয়ার শূন্য পথে বসল বিনিয়োগকারী৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ১৬৮১ জনকে সুপারিশ৬৬ দেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে চূড়ান্ত নিবন্ধন ইসিরঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর আজ, বিএনপির নানা আয়োজন
No icon

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার শূন্য পথে বসল বিনিয়োগকারী

অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে প্রশাসক বসিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় গভর্নর আশ্বস্ত করলেও বিনিয়োগকারীদের নিরাশ করেছেন। গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটির মূল্য এখন নেগেটিভ। তাই শেয়ারের ভ্যালু জিরো বিবেচনা করা হবে। কাউকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। এমন ঘোষণার পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা ইসলামি ধারার পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এমন ঘোষণায় পথে বসেছেন বিনিয়োগকারীরা।এর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ব্যাংক একীভূতকরণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়াও অযোগ্য অভিহিত করে শনিবারের মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তা না হলে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাওয়ের হুশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশে ব্যাংকগুলোর শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ এবং তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ার শূন্য করার বিষয়ে গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিএসইসিকে চিঠি দেওয়া হয়। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিএসইসির পক্ষ থেকে পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয়। ব্যাংকগুলো হলো সোশ্যাল, গ্লোবাল, ফার্স্ট সিকিউরিটি, এক্সিম ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এই পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক নামে নতুন একটি ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে।

সরকারের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচিতে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, মার্জারের সার্কুলার হওয়ার পর তা প্রত্যাহারের দাবি করেছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অথর্ব। আমাদের কথা কানে নেননি। আজকে পাঁচটি ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা যে অবস্থান করছে, তাঁরা কোথায় যাবেন? কাদের স্বার্থে আপনি (গভর্নর) কাজ করছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।মিজানুর রশিদ বলেন, আগামী মঙ্গলবার সারাদেশের বিনিয়োগকারীদের এখানে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান করব। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের ঘোষণা প্রত্যাহার না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তা না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে পদত্যাগ করতে হবে। আপনারা সবাই মঙ্গলবার দুপুর ২টায় উপস্থিত থাকবেন।মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, মার্জারের পুরো প্রক্রিয়াটা বিনিয়োগকারীদের ধ্বংস করতে নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদাহরণ বাংলাদেশে চলে না। এই ব্যাংকগুলোকে ভালো ভালো তকমা দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর এগুলোর দুর্বলতা সামনে এসেছে। তত দিনে উদ্যোক্তা-পরিচালকরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে গেছে। যাদের হাতে শেয়ার ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই সাধারণ ও স্বল্প মূলধনী বিনিয়োগকারী। তারা যদি তাদের বিনিয়োগের কোনো অংশ ফেরত না পায়, তাহলে সারাজীবনের জন্য পুঁজিবাজার ত্যাগ করবে।

 পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় বিএসইসিকে পুরোপুরি অন্ধকারে রাখা হয়েছে। এ সংক্রান্ত কোনো কমিটিতে বিএসইসির প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। ফলে একীভূতকরণের মাধ্যমে নতুন ব্যাংক গঠিত হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় তারা কোনো মতামত দিতে পারেনি। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর শেয়ারের বড় ধরনের নেগেটিভ ইক্যুয়িটির কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা না দেওয়া এবং ব্যাংকগুলোর শেয়ার শূন্য হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিএসইসির পক্ষ থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় পাঁচটি বিষয় বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণ বিষয়ে আগের সিদ্ধান্তই ঘোষণা করা হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় বিএসইসির কোনো সুপারিশই আমলে নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, যেহেতু ব্যাংকগুলো অবসায়ন না করে নতুন একটি ব্যাংক গঠিত হচ্ছে সে ক্ষেত্রে এসব ব্যাংকের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টি আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছি। আশা করি এসব ব্যাংক শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হওয়ার আগে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিএসইসির মুখপাত্র বলেন, ব্যাংক রেজ্যুলেশনের ৭৭ ধারায় এসব ব্যাংকের দুর্দশার জন্য কারা দায়ী সে বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোনো অবস্থাতেই এর জন্য দায়ী নন। সুতরাং তাদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।বিএসইসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গঠিত নতুন ব্যাংকে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার মূলধন জোগান দেবে। কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় কোনো কিছু করবে না, এটা কাম্য হতে পারে না।জানা গেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ২০৮ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা রয়েছে ১২০ কোটি ৮১ লাখ। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশ ৬৫ শতাংশের বেশি। এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে আরও ২৯ শতাংশ। মাত্র ৬ শতাংশ শেয়ার কোম্পানি উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে।