টানা পতনের ধারা থেকে বের হয়েছে শেয়ারবাজার। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দরপতন ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা প্রায় আড়াই মাস স্থায়ী ছিল। এতে দরপতন দীর্ঘায়িত হওয়ার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে সে শঙ্কা এখন কিছুটা হলেও কেটেছে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারাও প্রায় একই ধরনের মনোভাব পোষণ করেন। তবে তাদের ধারণার উল্লেখযোগ্য প্রতিফলন নেই শেয়ারবাজারে লেনদেনের জন্য বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্ট বা বিও অ্যাকাউন্ট খোলায়।গত দুই সপ্তাহে ৯ কার্যদিবসের দরবৃদ্ধির ওপর ভর করে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স প্রায় ২৫৫ পয়েন্ট বাড়ে। বিপরীতে বাকি চার দিনে ১১২ পয়েন্ট কমেছে। এ সময়ে ৭০ কোম্পানির শেয়ার ১০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে ২২টির দর বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি।ডিজিটাল পদ্ধতিতে শেয়ার ধারণের তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি প্রতিষ্ঠান সিডিবিএল সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪ সালে গত ৯ মে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ১৬ হাজার ২৮৫টি নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। তবে একই সময়ে ১১ হাজার ২৪৯টি অ্যাকাউন্ট থেকে সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে একই সময়ে শেয়ার থাকা অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ১৪ লাখ ৪ হাজার ২৯২টি থেকে কমে গত বৃহস্পতিবার ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৫টিতে নেমেছে। শেয়ার থাকা অ্যাকাউন্ট কমেছে ৬৬ হাজার ৮৩৭টি। আবার গত ডিসেম্বর শেষে সক্রিয় অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে একেবারে শেয়ারশূন্য অ্যাকাউন্ট ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬৪টি। গত বৃহস্পতিবার শেষে বেড়ে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৫০টিতে উন্নীত হয়েছে। এসব পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে, নতুন করে বিনিয়োগকারী বাজারে খুব বেশি আসছেন না।
গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ২০৪টি, যা গত বৃহস্পতিবার শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৮৯ হাজার ৪৮৯টিতে। নতুন বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ১৬ হাজার ২৮৫টি। নতুন খোলা ১৬ হাজার ২৮৫ অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৫ হাজার ৩৬টি এখনও ব্যবহার হয়নি, অর্থাৎ এসব অ্যাকাউন্টে কোনো শেয়ার কেনা হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বিও খোলা হয়েছে ১১ হাজার ৭৭৯টি। পরের সোয়া দুই মাসে খোলা হয়েছে ৪ হাজার ৫০৬টি। এর মধ্যে চলতি মে মাসে এখন পর্যন্ত মাত্র ৬৫৮টি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।এমন অবস্থার কারণ কী হতে পারে জানতে চাইলে মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশেকুর রহমান বলেন, নতুন বিনিয়োগকারীরা তখনই বিনিয়োগে আসেন, যখন তারা আস্থা পান যে, বিনিয়োগ করলে লোকসান হবে না। নিদেনপক্ষে একটা স্থিতিশীল বাজার তারা দেখতে চান। সম্ভবত সে ধরনের বাজার পরিস্থিতি এখনও হয়নি। বিনিয়োগ না এলে সাম্প্রতিক সময়ে দরপতনের ধারা থেকে কীভাবে বাজার বের হলো এমন প্রশ্নে আশেকুর রহমান জানান, বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ থেকে তা হয়েছে।তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলজুড়ে দরপতনের যে আতঙ্ক ছিল, এখন তা নেই। তবে যেভাবে বাজার বেড়েছে, তার ম্যাকানিজম কম-বেশি সবাই জানে। যেমন ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর দরপতন হবে এমন আশঙ্কা সবারই ছিল। কিন্তু কিছু বিনিয়োগ তহবিল জোগাড় করে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দুই সপ্তাহ পতন ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে ঠিকই দরপতন হয়েছে। এ দরপতন ঠেকাতে সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমা ৩ শতাংশে নামিয়ে পতন ঠেকানোর চেষ্টা চলে। এ পর্যায়েও কিছু সক্রিয় বিনিয়োগকারীই শেয়ার কিনেছেন বলে পতন বন্ধ হয়েছে। তবে কৃত্রিমভাবে দরপতন ঠেকিয়ে রাখার ব্যবস্থা যতদিন বাজারে থাকবে, ততদিন নতুন বিনিয়োগকারী আসার সম্ভাবনা কম।