ব্যাংকিং বা আর্থিক সেবা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছালেও এখনো দেশের বেশির ভাগ মানুষ এই সেবার বাইরে। শহর-উপশহরে ব্যাংকের শাখা পৌঁছে গেছে। গ্রাম্য বাজারগুলোতে ব্যাংকের শাখা না থাকলেও এজেন্ট ব্যাংকিং চলে গেছে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং- এই চার মাধ্যমে দেশের প্রায় সব মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে ব্যাংকিং সেবা। এখন সেবা গ্রহণে ইচ্ছুক যে কেউ চাইলে হিসাব খুলে সেবা নিতে পারছেন। এরপরও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২ (এসভিআরএস) শীর্ষক জরিপ থেকে জানা গেছে, দেশের ৫১ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়েছেন। আর সেবা নিচ্ছেন ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ। ব্যাংকিং সেবার বাইরে বেশি রয়েছেন নারীরা। আর দেশের প্রশাসনিক বিভাগগুলোর মধ্যে খুলনা বিভাগের মানুষ সবচেয়ে বেশি ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন। সব চেয়ে পিছিয়ে আছেন সিলেট বিভাগের মানুষ।দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকার মূল কারণ হিসেবে দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব ও সেবা সহজলভ্য না হওয়াকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, অনেক মানুষ আছেন যাদের ব্যাংকে টাকা জমানোর মতো অবস্থা নেই। দিন আন্তে দিন খায়। এ ছাড়া শিক্ষার অভাব থাকায় ব্যাংকিং সেবা নিতে ভয় পায়। এসব কারণে তারা এখনো বাইরে রয়েছে। তবে তাদের সচেতন করারও প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তারা।
বিবিএসের জরিপ বলছে, গত ১২ মাসের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের (১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী) মধ্যে যাদের ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব (নিজের নামে অথবা যৌথ নামে) বা ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কোনো আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট আছে, তারা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে যুক্ত হয়েছেন বলে জরিপে বিবেচনা করা হয়েছে। একটি ব্যক্তি অ্যাকাউন্টের মালিকানা বলতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যাংক, ঋণদানকারী সংস্থা (ক্রেডিট ইউনিয়ন), ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, পোস্ট অফিস অথবা মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানে একটি ব্যক্তিগত বা যৌথ মালিকানাধীন হিসাবকে বোঝানো হয়েছে।বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং সেবা সহজলভ্য করতে হবে। আর্থিক সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে সরকারের অন্য সেবাগুলোও সহজে তারা নিতে পারবে। তিনি বলেন, এই সেবার ক্ষেত্রে সরকারকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যাংকিং সেবা যতই বিস্তৃত হবে, সাধারণ মানুষ তত উপকৃত হবে। পাশাপাশি এটি অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জরিপে উঠে এসেছে, দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর অর্থাৎ ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ কোনো না কোনো ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা মোবাইল আর্থিক পরিসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট আছে। তবে সব পর্যায়ে নারীরা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। দেশের প্রশাসনিক বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আছে খুলনা বিভাগে। এ বিভাগে প্রাপ্তবয়স্কদের ৫৫ দশমিক ৭০ শতাংশ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আছেন। অন্যদিকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে সিলেট বিভাগ। এ বিভাগে ব্যাংকিং বা আর্থিক পরিসেবা অভিগম্যতার আওতায় এসেছে ৪০ দশমিক ১৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক।