ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিশা মার্টের টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়ে গত ১৬ নভেম্বর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ফেসবুক লাইভ করছেন চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদার। যদিও গত ৭০ দিনে অন্তত ৪০ বার আশ্বাস দিয়েও কোনো গ্রাহককেই তিনি টাকা দেননি বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। ডিসকাউন্টের প্রলোভনে ফেলে সাত হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া প্রায় ৭০০ কোটি টাকা এখনো রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কাছে। তবে বারবার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারায় এখন আর প্রতিষ্ঠানটির আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে পারছেন না কেউ। উল্টো উত্তেজিত গ্রাহকরা গত বৃহস্পতিবার মঞ্জুর আলম শিকদারকে বনানীর অফিসে আটকে রাখলে পুলিশ গিয়ে রাতে তাকে উদ্ধার করে। ধারদেনা আর জীবনের সব সঞ্চয় বিক্রি করে বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত না পেয়ে আলিশা মার্টের অনেক গ্রাহকই এখন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ঢাকা ছেড়ে যেতেও বাধ্য হয়েছেন কেউ কেউ। বিনিয়োগ করা টাকা কবে পাবেন, আদৌ পাবেন কিনা তা নিয়ে এখনো ঘোর অন্ধকারে আছেন প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগকারীরা। আলিশা মার্টের গ্রাহকদের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা তৌহিদুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে ৭ হাজার গ্রাহকের ৭০০ কোটি টাকা পাওনা আছে। গত দুমাসের বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানের মালিক টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে আসছেন। কিন্তু কাউকেই টাকা দেননি। এমন না যে, তাদের টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। ইচ্ছা করেই তারা ফেরত দিচ্ছে না। ইভ্যালিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মালিক গ্রেপ্তার হওয়ায় গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না, তাই বাধ্য হয়ে গ্রাহকরা কোনো মামলা করছেন না। কিন্তু দেওয়ালে তো পিঠ ঠেকে গেছে। আর কতদিন সহ্য করব? আগামী সপ্তাহে ঢাকার বাইরের গ্রাহকদেরও আসার জন্য বলা হবে। তার পর একযোগে আন্দোলনে নামব। তৌহিদ আরও বলেন, দীর্ঘদিন পর বৃহস্পতিবার দুপুরে চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম প্রতিষ্ঠানে এসেছিলেন। তিনি কোনো টাকা-পয়সা কাউকে দেননি। বিকালে চলে যেতে চাইলে গ্রাহকরা আটকায়। এর পর চেয়ারম্যানের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা গ্রাহকদের ওপর হামলা করে। বেদম মারধরে তিনজন গুরুতর আহতও হন।
পরে রাত ৯টার দিকে পুলিশ এসে অফিস থেকে চেয়ারম্যানকে নিয়ে যায়।ই-কমার্সের পাশাপাশি তিন হাজার প্রতিষ্ঠান থেকে ডিসকাউন্টের নামে আলিশা কার্ড বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আলিশা হোল্ডিংস লিমিটেড। প্রতিটির জন্য এককালীন ৭ হাজার ৯৮০ টাকা করে নেওয়া সেই কার্ড এখন কাজ করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকও কার্ডটিকে অবৈধ বলে চিঠি দিয়েছে। ফলে যারা আলিশা কার্ড কিনেছিলেন বিপাকে পড়েছেন তারা। টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না।সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিশা মার্টের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং, গ্রাহক প্রতারণা ও অফারের কার্ড বিক্রির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কিছু প্রতারণার অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তারা আলিশা কার্ডের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির আমাদের সময়কে বলেন, আলিশা কার্ড বিক্রির বৈধতার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গেও আলোচনা হয়। পরে তারা (আলিশা মার্ট) কার্ড বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।