নতুন নির্বাচন কমিশনের শপথ রোববারপ্রস্তুত হচ্ছে নির্বাচনী মাঠবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণাগাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৪ হাজারকুয়াশা ও তাপমাত্রা নিয়ে যে বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস
No icon

কৃত্রিমভাবে স্বাস্থ্য ভালো দেখাতে পারছে ব্যাংক

ঋণ আদায় না করেও আয় দেখাতে পারছে ব্যাংক। অনাদায়ী ঋণ নিয়মিত দেখানো যাচ্ছে। এর ফলে অনেক ব্যাংক কৃত্রিমভাবে আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো দেখাতে পারছে। শুধু করোনার এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন সুযোগ দিয়েছে তা নয়। গত কয়েক বছরে খেলাপি ঋণ যখনই বেড়েছে, তখন বিশেষ পুনঃতপশিল, পুনর্গঠন বা অন্য উপায়ে এসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খেলাপি ঋণ না কমে বরং বেড়েছে।আর্থিক প্রতিবেদন প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একজন ব্যাংকার বলেন, ২০২১ সালে ঋণ পরিশোধের চাপ কমাতে কিস্তির সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়ায় একজনের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা এমনিতেই তার চেয়ে কম পরিশোধ করলেও খেলাপি হতো না। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কোনো একজন ব্যবসায়ী হয়তো আট বছর মেয়াদি একটি ঋণ নিয়েছিলেন। চার বছর নিয়মিত কিস্তি পরিশোধের পর হয়তো আরও ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধ করার কথা। এর মধ্যে ২০২১ সালে হয়তো পরিশোধ করতে হতো ১০০ কোটি টাকা। তবে মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগের ফলে এমনিতেই তিনি ছয় বছর সময় পাচ্ছেন। এতে হয়তো তার ১০০ কোটি টাকার জায়গায় ৬৫ কোটি টাকা পরিশোধ করলেও খেলাপি হতো না। শেষ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ দিলেও খেলাপি না করার বিধান করা হয়েছে। এতে করে এখন তিনি ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও আর খেলাপি হচ্ছেন না। অথচ পুরো ৪০০ কোটি টাকার বিপরীতে আরোপিত (৯ শতাংশ ধরে) ৩৬ কোটি টাকার সুদ ওই ব্যাংক আয় খাতে নিতে পারবে। এর বিপরীতে ব্যয় বাদ দিয়ে পরিচালন মুনাফা হিসাব হয়। সেখান থেকে প্রভিশন সংরক্ষণের অবশিষ্ট অংশের ওপর সাড়ে ৩৭ শতাংশ সরকারকে কর বাবদ পরিশোধ করতে হবে। লভ্যাংশ বাবদ একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ হবে। অথচ পরবর্তীতে এই ঋণ খেলাপি হলে তা আর ফেরত যাবে না।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও সোনালী ব্যাংকের এক সময়ের চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতা ও সুশাসনের জন্য যা কাঙ্ক্ষিত নয়। ব্যাংকের খাতায় ভালো চিত্র দেখানো হচ্ছে। তবে আসল চিত্র সবাই জানে। এ প্রবণতা চলতে থাকলে আমানতকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা বাড়বে। তখন আমানত কমে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমবে। আবার ঋণ পরিশোধ না করার নতুন একটি গ্রুপ তৈরি হবে। এ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বেরিয়ে আসতে হবে।করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর ২০২০ সালের ১৯ মার্চ ঋণ শ্রেণীকরণ বিষয়ে বিশেষ সুবিধার প্রথম সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় ১ জানুয়ারি ঋণের শ্রেণিমান যা ছিল, তার চেয়ে বিরূপমানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না। তবে কোনো ঋণের শ্রেণিমানের উন্নতি হলে তা করা যাবে। এ সুবিধার মেয়াদ দু দফায় বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এর মানে কেউ ২০২০ সালে এক টাকা পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি করেনি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ঢালাওভাবে এ রকম সুবিধার ফলে সামর্থ্য থাকলেও ঋণ পরিশোধ না করার একটি নতুন পক্ষ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করে ব্যাংকগুলো। ঋণ শৃঙ্খলা ধরে রাখতে নতুন করে ঢালাও সুবিধা না দেওয়ার দাবির মধ্যে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এক নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে জানানো হয়, ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ আর বাড়বে না। তবে ঋণ পরিশোধের চাপ কমাতে কিস্তির পরিমাণ কমানোর ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে অবশিষ্ট মেয়াদের ৫০ শতাংশ সময় বৃদ্ধি এবং চলতি মূলধন ও ডিমান্ড ঋণ পরিশোধে ২০২২ সালের জুন ও ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।